বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল প্রদানের বিষয়টি কথার মারপ্যাঁচে এড়িয়ে গেছে উন্নত দেশগুলো। তাদের এ প্রবণতায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য অভিযোজন তহবিলের বরাদ্দ বাড়ানো এবং প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিল প্রদান ত্বরান্বিত করতে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ আহ্বান জানান।
জলবায়ু সম্মেলনের প্রাথমিক খসড়া ঘোষণা সম্পর্কে হতাশা জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কপ-২৬ সম্মেলন শুরুর আগে বিশ্বনেতারা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে যে উচ্চাশা তৈরি করেছিলেন, তার বড় অংশই পূরণ হয়নি। বরং এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়ন লক্ষ্যমাত্রাকে অযৌক্তিক ও অনৈতিকভাবে দুই ডিগ্রিতে নিয়ে যাবার চেষ্টা করা হচ্ছে। জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার বন্ধে সুনির্দিষ্ট টাইমলাইন রাখা হয়নি। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য অভিযোজন এবং ক্ষয়ক্ষতিসহ (লস অ্যান্ড ড্যামেজ) প্রতিশ্রুত শত কোটি ডলার বাৎসরিক জলবায়ু তহবিল প্রদানের নিশ্চয়তা দিতে উন্নত দেশগুলো আবারও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অথচ প্যারিস চুক্তির আওতায় ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের কথা ছিল। এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৮০ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল বলে নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে।
তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য অভিযোজন খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও জলবায়ু অর্থের মাত্র ২৫ শতাংশ এ খাতে পাওয়া গেছে। নতুন খসড়ায় এটা বৃদ্ধিতে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। এটি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
প্রকাশিত খসড়ায় ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত প্রসঙ্গটি আলাদা করে উল্লেখ করাকে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, প্যারিস চুক্তিতে লস অ্যান্ড ড্যামেজকে অভিযোজন থেকে আলাদা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপরও উন্নত দেশগুলো জলবায়ু অর্থায়ন সংক্রান্ত আর্থিক প্রতিবেদনে দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবিলায় প্রদত্ত সহায়তা একটি পৃথক কলামে উল্লেখ করতো না। বরং এবার বিষয়টি নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলো জোর দাবি তুললেও, উন্নত দেশগুলোও দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই যুক্তি দেখিয়ে ক্ষতিপূরণের অর্থ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করবো এই অবস্থান থেকে সরে এসে উন্নত দেশগুলো ক্ষতিপূরণের বিষয়টিতে একমত হবে এবং দ্রুত এর বাস্তবায়ন হবে। এর মাধ্যমে জলবায়ু অর্থায়নের বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।