ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কর্মীদের পাশাপাশি নগরীর বাসাবাড়ি থেকে ভ্যান সার্ভিসের মাধ্যমে ময়লা সংগ্রহ করে করপোরেশনের ডাস্টবিনে পৌঁছে দেয় বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতা কর্মী। টেন্ডারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো এ কাজের অনুমতি পায়। কিন্তু উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডে এখনো কোনো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়নি সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ডগুলো অন্তর্ভুক্ত হলেও এখনো সেই ইউনিয়ন থাকাকালীন সময়ে যেসব নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ময়লা সংগ্রহ বা ভ্যান সার্ভিস পরিচালনা করত তারাই এখনো এ কাজ করছে। এতে সিটি করপোরেশনের তদারকি না থাকায় সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে। টানা তিন থেকে চার দিনেও বাসাবাড়ির ময়লা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠান কাউন্সিলরসহ অন্যদের চাঁদা দিয়ে চলতে হচ্ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। গত বুধবার বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈমের বিরুদ্ধে মামলা করেছে একটি প্রতিষ্ঠান। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নুরুল আক্তার নামে এক ব্যক্তি নালিশি মামলা করেন। আদালত এই মামলা রেকর্ড করার জন্য দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার ওসি মুহাম্মদ মামুনুর রহমান বলেন, কাউন্সিলর আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। মামলায় আরো দুই জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন—মো. রাজু ও মো. মাসুদ।
মামলার বাদী নুরুল আক্তারের দাবি, তিনি ‘আশকোনা গাওয়াইর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা জনকল্যাণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। ১৯৯০ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটির ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি, দোকান, মার্কেট, বাজার, রাস্তা ও পুল থেকে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ ও অপসারণের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কাউন্সিলর আনিসুর রহমানের নির্দেশে মামলার আসামি রাজু ও মাসুদ তার কাছ থেকে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় বর্জ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহূত তার প্রতিষ্ঠানের চারটি ভ্যানগাড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি চালকদের মারধর করা হয়েছে। নিয়মিত চাঁদা না দিলে মেরে ফেলা ও গুম করার হুমকি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম বলেন, তার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, এ অভিযোগ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এম সাইদুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, তারা বিভিন্ন এলাকায় বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়ে থাকেন। তাদের নির্দিষ্ট ফি নিয়ে ময়লা সংগ্রহের কথা বলা আছে। আর নতুন ওয়ার্ডগুলোতে কাউকে এখনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এতদিনেও কেন এ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলছে এসব এলাকায়। ময়লা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে খুব শিগিগরই ঐসব এলাকায় টেন্ডারের মাধ্যমে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
জানা যায়, উত্তর সিটির দক্ষিণখান এলাকায় নিজ উদ্যোগে ময়লা সংগ্রহে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তারা ইচ্ছেমতো টাকা নেওয়ার পাশাপাশি সপ্তাহে তিন-চার দিন বা পাঁচ দিন পরপর বা এক সপ্তাহ পরেও ময়লা আবর্জনা নেয়। আবার কিছু এলাকায় প্রতিদিন নিলেও তা নির্দিষ্ট সময়ে নেওয়া হচ্ছে না। দক্ষিণখান এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে ফ্রেন্ডস ক্লিন ঢাকা নামে একটি সংগঠন। তারা প্রায় এক সপ্তাহ পরপর ময়লা সংগ্রহ করে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। তারা জানায়, এতে ময়লা জমে স্তূপ হয়ে যায়। দুর্গন্ধ ছড়ায়। এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ময়লা প্রত্যেক দিন না নিলেও প্রতি মাসে ১৫০ টাকা করে নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কিছু বললে উলটো ধমক খেতে হয় । তারা এর প্রতিকার চান।