বন্ধকি জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম তাহের। জমির মালিক তার কাছে সেই সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় তিনি মামলা করে হয়রানি এবং অন্যান্য আগ্রহী গ্রাহককে হুমকি দিয়ে তাড়ানোরও চেষ্টাও করছেন। এতেও কাজ না হওয়ায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপককে বন্ধকি জমিটি পাইয়ে দেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি। যদিও আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা কোনোভাবেই এ ধরনের কার্যকলাপে জড়াতে পারেন না।
এলাকার লোকজন চাপাচাপি করায় আমি ওই জমিটা কিনতে রাজি হয়েছিলাম
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে সাইদুল ইসলাম তাহেরের এ কার্যকলাপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখার খেলাপি গ্রাহক জনতা ট্রেডার্স ও জনতা ব্রিকসের বন্ধকি সম্পত্তি দখলচেষ্টার অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের নির্দেশনায় একটি দল পরিদর্শনে গিয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন তৈরি করে।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসে কর্মরত উপ-ব্যবস্থাপক মো. সাইদুল ইসলাম তাহের বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রভাব খাটিয়ে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহক জনতা ট্রেডার্স ও জনতা ব্রিকসের বন্ধকি সম্পত্তি কিনতে চান। কিন্তু অন্যান্য গ্রাহকের তুলনায় মূল্য কম দেয়ায় মালিকরা তার কাছে সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি হননি। এ কারণে মালিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও অন্যান্য আগ্রহী গ্রাহকদের হুমকি দিয়েছেন তাহের। তার কারণেই অন্য গ্রাহকের কাছে জমিটি বিক্রি করতে পারেননি মালিক। তাহেরের কাছে ওই জমি বিক্রি না করার কারণগুলোর মধ্যে কম দাম প্রস্তাব এবং অতিরিক্ত দুই বিঘা জমির দাবি অন্যতম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সাইদুল ইসলাম তাহেরের কন্যা সাদিয়া তাসনিম এবং স্ত্রী হাসিনা পারভীনের নামে ভিন্ন ব্যাংকে কোটি টাকার লেনদেন করা হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে আইএফআইসি ব্যাংকে মেয়ের হিসাবে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা জমা করেন তাহের। এছাড়া মেয়ে ও স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় তিন কোটি টাকার স্থিতি পেয়েছে পরিদর্শক দল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে সবশেষে উল্লেখ করা হয়, সাইদুল ইসলাম তাহের জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখা ব্যবস্থাপক নাজমুল হুদা যৌথভাবে জনতা ব্রিকস এবং জনতা ট্রেডার্সের বন্ধকি জমি মুনাফার আশায় ক্রয়ে আগ্রহী হন।
জানতে চাইলে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখার ব্যবস্থাপক নাজমুল হুদা বলেন, এনআই অ্যাক্টে মামলা হওয়ায় জনতা ট্রেডার্স এবং জনতা ব্রিকসের মালিককে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলা থাকার কারণে আমরা এখনো (বন্ধকি সম্পত্তি) নিলামের কোনো উদ্যোগ নেইনি। গ্রাহক যে কোনোভাবে টাকা পরিশোধ করে দিলে আমরা মামলা উঠিয়ে নেব। বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন আগে তদন্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ তথ্য আমার জানা নেই।
রাজশাহীর এক ব্যাংক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত সাইদুল ইসলাম তাহের। রাজশাহীর প্রতিটি ব্যাংকের প্রত্যেকটি শাখার ম্যানেজারের কাছে তিনি ত্রাসের মতো। যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আমরা সম্মান করি। কিন্তু এ সম্মানের অপব্যবহার করে আসছেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাইদুল ইসলাম তাহের বলেন, ব্যাংকের কোনো জমির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা থাকলে থার্ড পার্টি (তৃতীয় পক্ষ) অ্যাগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। এলাকার লোকজন চাপাচাপি করায় আমি ওই জমি কিনতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু অন্য গ্রাহক আমার চেয়ে বেশি দাম বলায় (আল-আরাফাহ ইসলামী) ব্যাংকের ম্যানেজার জমি আমার কাছে হস্তান্তর করেননি।
তিনি বলেন, এ কারণে আমিও কোনো দাবি রাখিনি। দাবি না রেখেই চলে এসেছি। আমি মনে করি আমি নিরপরাধ। এ বিষয়ে যে তদন্ত হয়েছে তার ফলাফল এখন পর্যন্ত আমার অজানা। তদন্তের পর কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসবে সেটা পুরোপুরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাপার।