1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:২৭ অপরাহ্ন

বেঁচে থাকার কিছু অবিস্মরণীয় ঘটনা

Dr.Shebendra karmakar
  • আপডেট : সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১
আমার বয়স ৩ কি ৪ বৎসর। তখন প্রথমবারের মত একবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম। আমাদের বাসার পাশ দিয়েই বয়ে গেছে খরস্রোতা খাল। এ খালে নিয়মিত নদীর পানি আসা যাওয়া করত। নৌকা চলত। প্রচুর নদীর মাছ , গুটি কাকড়া পাওয়া যেত এ খালে। মূল গ্রামের প্রবেশ পথে খালের উপর একটি কাঠের সাঁকো ছিল। বিকেল হলে সাঁকোর উপর বসে আমরা খালের পানিতে ঢিল ছুড়তাম। একদিন খেলতে খেলতেই খরস্রোতা  খালের পানিতে পড়ে গেলাম। স্রোতের  একটানে কিছুটা দূরে চলে গেলাম। সাঁতার জানতামনা। সাঁকোর কাছেই ছিলেন আমাদের গ্রামের শংকর দে। পরবর্তীতে স্কুল শিক্ষক হয়েছিলেন। শংকর দাদা খালে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে তুলে নিলেন। শঙকর দা বেঁচে আছেন কিনা জানিনা। আমি কিন্তু দাদার কারনে এখনো এ পৃথিবীতে বেঁচে আছি।
১৯৭১ সাল। দেশে স্বাধীনতার যুদ্ধ চলছে। তখন আমার বয়স ৪ কি ৫ হবে। আমরা শহরের বাসা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে রামগন্জ নামে একটি গ্রামে আশ্রয় নিলাম। বয়স কম হওয়ার কারনে যুদ্ধটা কি ভাল করে বুঝতামনা। তবে বাবা ও স্থানীয়দের মরিচের গুড়া বাতাসে ছুঁড়ে দিয়ে কিভাবে পাকসেনাদের প্রথম আক্রমন প্রতিহত করা যায় সে নিয়ে কথা বলতে শুনেছি। পাকিস্তানী ও তার দোসর রাজাকাররা এখন গ্রামেও হামলা চালানো শুরু করেছে। মা, বাবা ৩ ভাই এক বোন সহ আমাদের পরিবার। যখনেই শুনা যেত হানাদার আসছে গ্রামবাসী সবাই মিলে পাট ক্ষেতে লুকিয়ে থাকতাম। সেই বিভিষিকাময় সময়ের অনুভ’তি খুব মনে পড়েনা কারন বয়সটা তো বোঝার নয়। সে সময়েই আমার ছোট ভাই হিমু ডায়রিয়ায় মারা যায়।
আমাদের প্রাতক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য জঙ্গলের ভিতর যেতে হত। কারন সুনির্দিষ্ট ল্যট্যিন ছিলনা। আমি একদিন প্রাতক্রিয়া সেড়ে শৌচকার্য করার জন্য পুকুরে গেলাম। ফেরার পথে একটি পাগলা কুকুর তার মুখের যতটুকু আয়তন ঠিক ততটুকু কামড় দিয়ে আমার বাম রানের মাংশ তুলে নিয়ে পালাল। আমার চিৎকার শুনে সবাই ছুটে আসল। চারিদিকে যুদ্ধ। আমাকে নিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ভাগ্যে টোটকা চিকিৎসাই ছিল। সেই গ্রাম্য হাতুড়ে চিকিৎসাই আমার রানের হাড়ানো মাংশ ধীরে ধীরে ফিরে এল। আমি সুস্থ্য হয়ে উঠলাম। যুদ্ধ শেষে বাবা ডাক্তার দেখিয়েছেন। ডাক্তার বলছে এখন আর সমস্যা নেই। সেই আমি দিব্যি এখনো বেঁচে আছি ।
শহরের কাছাকাছি গ্রামগুলো পাকিস্তানী হানাদার ও রাজাকারদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত হতে লাগল। বাবা আমাদেরকে নিয়ে নিরাপত্তার অভাববোধ করলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন রামগন্জ ছেড়ে চরবাটা বড় ভাই এর বাড়িতে আশ্রয় নিবেন। রামগন্জ থেকে চরবাটা যেতে শহরের প্রধান সড়ক ধরে যেতে হবে। এখন আমরা ২ ভাই ১ বোন আর মা ও বাবা। বাবা একটি রিক্সা ভাড়া করলেন মাইজদী থকে সোনাপুর পর্যন্ত। আমার যতটুকু মনে পড়ে রোশনবানী সিনেমা হলের পেছন থেকে কাপড় দিয়ে ঘেড়া একটি রিক্সায় সবায় উঠেছিলাম। রিক্সা কাপড় দিয়ে ঘেড়া ছিল যেন অন্যরা বুঝতে পারে কোন মুসলিম পরিবার যাচ্ছে । বাবা আমাদের ভাই বোনদের কে শিখিয়ে দিলেন যেন আব্বা আম্মা বলে ডাকি। যাত্রা শুরুর আগে বাবা খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হলেন সেনাবাহিনীর টহল গাড়ী এ মাত্র ব্যরাকে ফিরে গেছে। প্রধান সড়ক অতিক্রম করার জন্য এ সময়টুকু নিরাপদ। মৃত্যুঝুকিঁ নিয়ে বাবা যাত্রা শুরু করলেন। আমাদের গ্রামটি প্রধান সড়কের পাশেই ছিল। যখন গ্রামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম আমার স্মৃতি বিজড়িত গ্রামের দিকে তাকালাম। শুধু অঙ্গার হয়ে যাওয়া গাছগুলো দাড়িঁয়ে আছে আর কোন ঘরবাড়ির চিহৃ নেই। তখন বয়স মাত্র ৪/৫ বৎসর। অনুভ’তি অত প্রখর ছিলনা। কিন্তু অর্ধশতাব্দী বয়স পেরিয়ে মনে হলো  স্মৃতিগুলো লিখে রাখি।
সোনাপুর থেকে আরও ১৫/২০ মাইল হবে চরবাটা। সেখানে বাবার মেঝো ভাই থাকেন। চরাঞ্চলের  রাস্তাঘাট ভাল না। তাই পাকবাহিনী সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। তবে রাজাকারদের উপদ্রপ ছিল। সোনাপুর নেমে কিছুটা হেটে কিছুটা গড়ুরগাড়ী চড়ে জ্যাঠার বাড়ীতে পৌঁছালাম। জ্যাঠার বাড়িতে আমরা অসহায়ের মত ছিলাম। জ্যাঠার পরিবারের সাথে আমাদের বাড়তি কয়েকজনের ভরন পোষন এর ব্যবস্থা করতে গিয়ে প্রায়ই পারিবারিক অসন্তোষ লেগেই থাকত। বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন দেশের বাড়ী সন্দীপে চলে যাবেন। চারিদিকে যুদ্ধ এবং ঝড়বাদলের মৌসুম। চরবাটা থেকে নদীপথে সন্দীপ যেতে হয়। ঝড় ঝন্জা বিক্ষুদ্ধ আবহাওযা। একটি মাঝারি আকারের নৌকায় উঠলাম। যাত্রীতে ভরপুর সাথে মস্তবড় একটি মহিষ নদী পারাপারের জন্য তোলা হল। সন্দীপ যাওয়ার নদী পথটি প্রচন্ড উত্তাল থাকে। কারন দেশের সবকটি নদীর গতি পথ এক হয়ে সমুদ্রে মিশেছে। এজন্য এটি উত্তাল থাকে। ঝড়বাদলে এটি অগ্নিমূর্তি ধারন করে। বড় বড় পাহাড় সমান ঢেউ ছুটে আসে। মাঝ নদীতে আমাদের নৌকা প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যে পড়ল। পাহাড় সমান ঢেউ নৌকার উপর আচড়ে পড়তে লাগল। নৌকা প্রায় ডুব ডুব ভাব। অবলা প্রানি মহিষ মৃত্যু আতংকে লাফালাফি শুরু করল। প্রান ভয়ে সব যাত্রিরা ভগবান আল্লার নাম ডাকে জিকির শুরু করল । দক্ষ মাঝি অনেক কষ্টে নৌকাটি মাঝ নদী থেকে কাছের একটি চড়ে ভিড়িয়ে দিল। ঝড় বৃষ্টি থামার পর গন্তব্যের উদ্দেশ্যে আবার পাল তুলল। সকল যাত্রী ও মহিষ সহ নৌকাটি সন্দীপে পৌঁছাল। সন্দীপ আমার জন্মভূমি। সেই ছোট্র বেলাকার স্মৃতিগুলো এখন মনে পড়লে নিজেকে বেঁচে থাকার আনন্দে পুলকিত হই।
স্মৃতিগুলো হাতড়াতে গিয়ে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনার কথা মনে এলো। ঐ বাস দুর্ঘটনায় ড্রাইভার সহ ৪ জনের এর মৃত্যু হয়েছিল। অলৌকিক ভাবে আমি বেঁচে গেছি। ঢাকা থেকে নোয়াখালী যাচ্ছিলাম। পরের দিন ছোট বোনের বিয়ে। ঠিক সন্ধ্যা। কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম পাড়ি দিাচ্ছলাম । হঠাৎ একটি বিকট শব্দ। আমি জ্ঞান হারালাম। চারিদিকের আর্তনাদ, চিৎকার চেঁচামেচিতে আমার সম্ভিৎ ফিরল। দেখি চারিদিক অন্ধকার আর আর্তনাদ। ঠিক বুঝতে পারছিনা কোথায় আছি। প্রথমে বোনের বিয়ের জন্য কেনা কাটা ভরা ব্রিফকেসটি খুঁজে নিলাম। দেখি সেটি জায়গা মতই আছে। সিট ছেড়ে উঠে গাড়ী থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজলাম। দেখলাম গাড়ীর সামনের বড় গ্লাসটি নেই। স্টেয়ারিং ভেঙ্গে ড্রাইভারের গায়ে ঢুকে গেছে। ড্রাইভার মৃত অবস্থায় সিটে বসে আছে। আমি গাড়ীর সামনে দিয়ে লাফ মারলাম। পড়লাম কদমাক্ত ধানক্ষেতে। বুঝলাম বাসটি রাস্তা থেকে সিটকে ধানক্ষেতে পড়ে আছে। আস্তে আস্তে প্রধান সড়কে উঠলাম। নিজেকে পরীক্ষা করলাম। না বড় কোন চোট লাগেনি। পরের দিন ছোট বোন স্মৃতির বিয়ে। ঐ দূর্ঘটনায় আমার যদি মৃত্যু হত আমার বোনের বিয়েটও  ভেঙ্গে যেতো। ভায়ের মৃত্যুর কারনে কুসংস্কার আছন্ন সমাজ বিয়েটা ভেঙ্গে দিত মেয়েকে অপয়া বলে। আমি বাসের ডান দিকের বি বা সি সাড়িতে ছিলাম। দূর্ঘটনাটি ঘটেছিল ট্রাক ও বাসের মুখোমুখি সংর্ঘষ। যার জন্য বাসের ডান পাশ এর কোনার অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। পরে জেনেছি ড্রাইভার সহ সামনের দিকের মানুষগুলো সরাসরি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। সেই পুরানো স্মৃতি মনে করে বেঁচে থাকার আনন্দে আনন্দিত হয়। আমার ছোট বোনের জন্ম স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক পরে। যুদ্ধের কষ্টের ধকল তাকে সইতে হয়নি। বোন বোনের জামাই দুজনেই হাই স্কুলের শিক্ষক। তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। তারা খুব ভাল আছে।
স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে জীবনে ঘটে যাওয়া আরেকটি ভয়ংকর দূর্ঘটনার কথা মনে এলো। সেটিও বাসে ঘটেছিল তবে বাস দূর্ঘটনা নয়। সম্ভবত নারায়নগন্জ থেকে বাসে ঢাকায় আসছিলাম। বুকে একটু ঠান্ডার ভাব ছিল। তাই খুশখুশে কাশ ছিল। এমন সময় বাসে একজন হকার চ্যাবন বিক্রি করছিল। জানতাম চ্যবনপ্রাশ কাশের জন্য উপকারী। হকার থেকে কিনে চ্যাবনপ্রাশ খেলাম। পাশের সিটে বসা যাত্রী আমার সামনে পানি এগিয়ে দিয়ে বললেন ,পানিটা খান আরও ভাল লাগবে। পানিও খেলাম। আর কিছু টের পায়নি। পরে জানলাম আমি নাকি বাসে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। বাস এর কন্ডাকটর ও ড্রাইভার আমার গন্তব্য সর্ম্পকে জেনেছিল আমি মালিবাগ যাব। তারা আমাকে মালিবাগ পৌঁছে দিল। দীর্ঘদিন কাজের সূত্রে ও অত্র এলাকায় বসবাস করার কারনে আমাকে অনেকেই চিনত। মালিবাগ শাহজালাল কমপ্লেক্সের তত্বাবধায়ক আমির হোসেন ভাই আমাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে চলে গেলেন। জরুরী বিভাগে আমার চিকিৎসা হয়েছিল। পাকস্তলি ওয়াশ করে চেতনানাশক বিষ বের করেছিল। প্রায় ৭/৮ দিন আমার কোন হুশ ছিলনা। আমির হোসেন ভাই এর মহানুভবতা আমি কোন দিন ভুলবনা। পরে আরো জেনেছি ঢাকা সিটি কলেজের প্রফেসর আরেফিন চৌধুরী (প্রয়াত), আলআরফা মানি একচেন্জের মালিক মিজান ভাই ,মাহবুবুর রহমান হিরো (প্রয়াত) আরও অনেকে আমার পাশে ছিলেন। ম্যাচে থাকতাম তাই টেক কেয়ার করারও কেও ছিলনা। আমাকে এ অবস্থায় আমার ছাত্র জীবনের বন্ধু সাংবাদিক ,পত্রিকা সম্পাদক ও মালিক ,রাজনীতিবিদ কিবরিয়া চৌধুরি তার বাসায় তুলে নেয়। পারিবারিক সেবা যত্নে আমি সুস্থ্য হয়ে উঠি। আমার অনেক বিপদে কিবরিয়া অকৃত্রিম বন্ধুর মত পাশে দাঁড়িয়ে ,ছিল । আমৃত্যু কিবরিয়ার এই ভালবাসা ,সহযোগিতা ও সহমর্র্মিতার কথা স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
জীবনে ঘটে যাওয়া সর্বশেষ ভয়ংকর ঘটনা ছিল আমি অপহরন হয়েছিলাম। ঘটনা ঘটেছিল যে কোন এক রমজান মাসে। ইফতারের ঘন্টা দুই আগে পুরানা পল্টন মোড়ে দাঁড়িয়েছিলাম। মালিবাগ মোড় আসব।ভীষন জ্যাম।পাবলিক বাস, রিক্সা কোনটিই পাচ্ছিলামনা। হঠাৎ একটি  খালি মাইক্রো বাস  মোড়ে এস দাঁড়াল এবং হাঁক দিতে লাগল মালিবাগ ও রামপুরার যাত্রী নেবে বলে। অপেক্ষমান যাত্রীরা হুড়েুাহুড়ি করে বাসে উঠল আমিও উঠলাম। পল্টন মোড় থেকে কিছু দূর যেতেই পেছনে বসা একজন আমার গলা ও মুখ চেপে ধরল আর ধমক দিয়ে বলল ‘একদম চুপ শব্দ করবিনা। পাশে বসা দুপাশের দুজন আমার হাত ও চোখ বেঁধে ফেলল। সোনার আংটি ,এনড্রয়েড মোবাইল,ঘড়ি ও মানিব্যাগের সব টাকা নিয়ে নিল।আমার অফিস ব্যগটি তন্ন তন্ন করে খুঁজলো। ওরা আমাকে বলছে’ তোর কাছে ৫ লক্ষ ছিল ঐ টাকা বের কর না পেলে পরপারের রাস্তা দেখাব।আমি ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম’ ভাইরে আমার কাছে যা আছে সব নিয়ে যান শুধু আমাকে  ছেড়ে দিন।ওরা আমাকে বলছে’ মোবাইলে রিং করে ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে আসতে বল। আমি বললাম আমি সাধারন মানুষ।এ টাকা দেয়ার ক্ষমতা নেই আমার।ওরা আমার মানি ব্যাগ থেকে ভিজিটিং কার্ড দেখেছিল।ডক্টর দেখে ওরা কিছুটা ভদ্র আচরন করল। মাইক্রাবাসটি আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিল তা বুঝার সুযোগ ছিলনা কেননা আমার চোখ দুটি বাঁধা ছিল। আসলে মাইক্রেবাসে যাত্রী বেশে উঠা সবাই ছিল অপহরনকারী দলের সদস্য ।আমিই শুধু যাত্রী ছিলাম।ওরা টেলিফোনে কারও সাথে কথা বলে নির্দেশনা নিচ্ছিল।  শুধু শুনতে পেলাম ‘রং টার্গেট ,ছেড়ে দাও।  ওরা আমাকে বলল ‘ তোকে ছেড়ে দেব, বেশী বাড়াবাড়ি করবিনা , চুপ করে বসে থাক। একটি রিভলবার দিয়ে গুতো দিয়ে বলল ‘ফুটো করে দেবো। আমি বার বার মিনতি করে যাচ্ছিলাম।  ওরা শুধু আমাকে শাসাচ্ছে।  দু একটা চড় থাপড় মারছে। ওদের নির্ধারিত জায়গায় এসে আমাকে বলল’ তোকে এখানে নামিয়ে দিচ্ছি। সোজা দাঁড়িয়ে থাকবি।এদিক সেদিক গেলে গাড়ী চাপায় মরবি।ওরা আমাকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় গাড়ী থেকে নামিয়ে দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। আমি শুধু দ্রুততম গাড়ীর ছুটে যাওয়ার আওয়াজ শুনছি। বুঝলাম কোন নির্জন মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছি।গলায় প্রচন্ড ব্যথা। কারন যতক্ষন ওদের সাথে ছিলাম ওরা আমার গলাটা চেপে ধরে বসেছিল। তারপরও চিৎকার করলাম ‘ হেল্প, হেল্প। প্রায় ১০ মিনিট ওখানে দাঁড়িয়ে সাহায্য চাইলাম। এর কিছুক্ষন পর একজন এগিয়ে আসল।আমি তাকে চোখের বাঁধন খুলে দিতে বললাম। তিনি বাঁধনটি খুলে দিলেন।চারদিকে শুধু অন্ধকার দেখছি।আস্তে আস্তে চোখের আলো স্পষ্ট হল , দেখতে পেলাম একটি ফ্লাইওভারের উপর দাঁড়িয়ে আছি। যে মানুষটি আমাকে সাহায্যের জন এগিয়ে এল সে ঐ ফ্লাইওভারের একজন নিরাপত্তা প্রহরী।  তিনি আমার হাতের বাঁধন খুলতে চাইলেন আমি খুললামনা। আমার উদ্দেশ্য ছিল এ অবস্থায় প্রেস ক্লাবে যাব।  সরকারকে জানানো সাধারন মানুষের নিরাপত্তা কোথায় গিয়ে পৌঁচেছে।  ফ্লাইওভারের নিরাপত্তা প্রহরীকে জিজ্ঞাস করলাম এটি কোন জায়গা। সে বলল এটি সায়েদাবাদ ফ্লাইওভার। আমি ইত্তেফাক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি।
অপহরনকারীরা আমার ব্যাগটি আমার কাধেঁ ঝুলিয়ে দিয়েছিল। আমার হাতটি বাঁধা ছিল।এ ভাবেই ফ্লাইওভার থেকে নিচে নামলাম। নেমেই একজন রিক্সাওয়ালাকে নিজের সমস্যার কথা জনালাম এবং সাহায্য চাইলাম আমাকে যেন প্রেস ক্লাবে নামিয়ে দেয়। রিক্সা্ওয়ালা খুবই মানবিক ছিল। সে কোন কিছু প্রশ্ন না করে আমাকে তুলে ণিল এবং প্রেস ক্লাবে নিয়ে এল।আমার কাছে কোন ভাড়া ছিলনা।তাই রিক্সাওয়ালা কোন ভাড়া চাইলোনা।আমি ঠিক এ অবস্থায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢুকলাম। তখন রাজকীয় ইফতার চলছিল।আমি সাংবাদদিকদের দৃষ্টি আর্কষন করতে ব্যর্থ হই কারন সেদিন হয়তবা  বিধ্বস্ত মানবতার চেয়ে জমকালো ইফতার পার্টিটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন ছিল। অথচ একজন রিক্সাওয়ালা  ইফতার না করে বিনা ভাড়ায় আমাকে নিয়ে এল। হয়তবা আমার গুলিবিদ্ধ লাশটি তাজা সংবাদের উৎস হত।
প্রেস ক্লাবে বসেই অন্য একজনকে দিয়ে হাতের বাঁধনটা খোলালাম। এমন শক্ত করে বেঁধে ছিল যে আমার হাতের পাতায় রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শুধু একজন বলেছিল আপনি থানায় যান এটি পুলিশের কাজ।আমিত জানতাম এটি কার কাজ।আমি শুধু সরকারকে সচেতন করতে এসেছি। প্রেস ক্লাব থেকে শান্তিবাগ বাসায় ফিরলাম।   আমার পরিবার ঢাকার বাইরে বেরাতে গিয়েছে। বাসায় আমি একা। মোবাইল না থাকায় সবার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আমাকেও কেও পাচ্ছেনা।গলা চোখ হাত সবই ব্যথা। তারপরও বাসায় বসে পুরো ঘটনাটি ফেইসবুকে স্টেটাস দিলাম।  মোটামোটি সবাই জানতে পারল। আমার অত্যন্ত শুভাকাংকী নৌ বাহিনীর অবসর প্রাপ্ত কর্মকত্তা সাইফূল পাইকার ভাই বিষয়টি পুলিশ হেড কোয়াটারে একজন উধ্বতন পুলিশ কর্মকত্তার নজরে আনলেন। পুলিশ কর্মকত্তা আমাকে হেড কোয়াটারে ডাকালেন এবং সাহায্য করতে চাইলেন। আমি নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে বিষয়টি নিয়ে আর এগুতে চায়নি। আমি এখনো বেঁচে আছি এটিই আমার সবচেয়ে বড় পাওনা।
Dr.Shebendra karmakar PhD

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি