1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ

অনলাইনে কোরবানির গরু-ছাগল বিক্রিতে পিছিয়ে নেই নারী উদ্যোক্তারাও

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই, ২০২১
  • ২৫০ বার দেখা হয়েছে

নারায়ণগঞ্জে গবাদিপশুর খামার আছে রাজিয়া কবিরের। ছয় বছর ধরেই তিনি মাখন, পনির, ঘিসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ডেইরি বিজনেস করছেন। তবে অনলাইনে এবারই প্রথম কোরবানির পশু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে এমএ করা রাজিয়া জানান, স্বামী রাশেদুল কবির ও তিনি একসঙ্গে গরুর লালনপালন-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেন। তিনি পুরান ঢাকার মেয়ে। তাঁর দাদার গরুর দুধের ব্যবসা ছিল। বাড়িতে ছোটবেলা থেকেই গরু দেখে বড় হয়েছেন। নিজের ছেলের জন্মের পর ছেলেকে খাঁটি দুধ খাওয়ানোর জন্য চারটি গরু দিয়ে উদ্যোগ শুরু করেন। বন্ধু-স্বজনদের উৎসাহে পরে বড় আকারের ব্যবসা দাঁড় করান। তাঁর পণ্য বিক্রির ৮০ শতাংশ ক্রেতাই উই-এর সদস্য।
রাজিয়া অ্যাগ্রো ফার্মের উদ্যোক্তা রাজিয়া কবির বলেন, ‘একসময় গরুর হাট মানেই তার ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই ছিলেন পুরুষ। তবে এখন গরুর বিক্রেতা হিসেবে সব তথ্যই ক্রেতাদের দিচ্ছি। ভিডিওতে গরু নিয়ে কথা বলছি।’
অনলাইন বা ডিজিটাল হাটে কোরবানির জন্য গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন পশু বিক্রিতে নারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসেছেন। গরুর ওজন, কয়টা দাঁত, মাংস কতটুকু পাওয়া যাবে, ক্রেতাদের এ ধরনের জটিল সব প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছেন নারীরা। লাইভে বা ভিডিওতে গরু নিয়ে কথা বলছেন। এমনকি এই উদ্যোক্তাদের ফেসবুক পোস্টেও গরু-ছাগলের ছবিতে ভরে যাচ্ছে।
তাসমিমা হোসেন এবার ঈদে অনলাইনেই কোরবানির গরু কেনা প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বললেন, ‘দুই বছর আগেও নিজেদের ফার্মের গরু কোরবানি দিতাম। তবে বিভিন্ন ঝামেলায় ফার্মটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। করোনার এ সময়ে হাটে গিয়ে কোরবানির গরু কেনার পরিস্থিতি নেই। তাই অনলাইনে গরুর ছবি দেখেই কিনে ফেলেছি। আমি যে নারী উদ্যোক্তার কাছ থেকে সব সময় দুধ, পনির, ঘিসহ বিভিন্ন পণ্য কিনি, তাঁর কাছ থেকেই চোখ বন্ধ করে গরুও কিনে ফেলেছি। কারণ, এই উদ্যোক্তা আমার সেই বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছেন যে তিনি যে পণ্যই দিন না কেন, তাতে কোনো ভেজাল পাওয়া যাবে না।’
তাসমিমা হোসেন হাসতে হাসতে বললেন, ‘উদ্যোক্তাকে শুধু বলেছিলাম, এক লাখ টাকার মধ্যে একটি গরু কিনতে চাই। তিনি ২০৫ কেজি ওজনের গরু দেখালেন, তা পছন্দ হয়ে গেল। পরে কিনে ফেললাম। ঈদের আগে গরু হাতে পেয়ে যাব। সবকিছুই অনেক সহজ হয়ে গেছে।’
তাসমিমা হোসেন আরও বলেন, করোনার এ সময়ে যে নারীরা অনলাইনে ব্যবসা করছেন, তাঁদের স্যালুট জানানো প্রয়োজন। এই নারীরা অর্থনীতিকে সচল রাখার পাশাপাশি পুরো পরিবারকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ১১ লাখের বেশি সদস্যের গ্রুপ উইমেন অ্যান্ড ই কমার্স ফোরামের (উই) প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার জানালেন, এবারই প্রথম উই-এর উদ্যোক্তারা কোরবানির গরু-ছাগল বিক্রি করার সুযোগ পেয়েছেন। নিবন্ধনের কথা জানানো হলে ধারণা করা হয়েছিল, এতে নারী উদ্যোক্তারা তেমন উৎসাহিত হবেন না। তবে গত ৯ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ‘হ্যাশট্যাগ উই হাটবাজার’-এ ৫৬ নারী উদ্যোক্তা গরু-ছাগল বিক্রির জন্য নিবন্ধন করেছেন। এতে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
উদ্যোক্তারা গরু বা ছাগলের ছবি দিয়ে তার ওজনসহ বিভিন্ন তথ্য জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। ক্রেতারা ছবি দেখে পছন্দ হলে উদ্যোক্তার সঙ্গে মেসেঞ্জার বা টেলিফোনে কথা বলে দরদাম ঠিক করছেন।
নাসিমা আক্তার বলেন, ‘আমি যখন কলেজে পড়তাম, তখন থেকে গরু নিয়ে কাজ করার কথা চিন্তা করতাম। তবে এ খাতে বিনিয়োগ করতে সাহস পাইনি। অথচ বর্তমানের নারী উদ্যোক্তারা অনলাইনে এই গরু নিয়েই দারুণভাবে ব্যবসা করছেন। অনেকের বিক্রিও বেশ ভালো।’
নাটোরের আয়েশা মীম এর মধ্যেই কোরবানির গরু-ছাগল বিক্রি করেছেন ১৬ লাখ টাকার বেশি। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এত দিন যত উদ্যোগ নিয়েছি, তার মধ্যে এবারের উদ্যোগটা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। কোরবানির গরু-ছাগল সারা দেশে ডেলিভারি দিচ্ছি।’
ইসরাত জাহান রোজার ঈদের পরেই গরু কিনে নরসিংদীতে খামারে লালন-পালন করছেন। তাঁর সঙ্গে রোববার রাতে টেলিফোনে যখন কথা হয়, তখন তিনি জানান, অনলাইনে নাটোরের একজন ক্রেতা একসঙ্গে ১৫টি গরু নেবেন বলে কথা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজিতে ডাবল এমএস করা ইসরাত বলেন, তিনি সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করেন। রাজধানীতে পান্থপথে নিজস্ব অফিস করোনায় বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তিনি অনলাইনে নীলাস ক্রিয়েশন নামের পেজে জামদানিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন। অনলাইনে সব গরু বিক্রি হলে তার দাম পাওয়া যাবে ৩০ লাখ টাকার বেশি। তবে তিনি জানান, তাঁর যেহেতু খামার আছে, তাই সব গরু বিক্রি না হলেও তেমন সমস্যা নেই।
রাজধানীর বসুন্ধরার মিতাশা রহমান খান গরু নিয়ে অনলাইনে এবারই প্রথম ব্যবসা করছেন। আলাপের শুরুতেই জানালেন, তিনি ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালোই সাড়া পাচ্ছেন। এ পর্যন্ত অনলাইনে ৯টি এবং গাজীপুরে নিজস্ব ফার্ম থেকে ১৫টি গরু বিক্রি করেছেন। জানালেন, অনলাইনের ক্রেতাদের ট্রাকে করে গরু বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ ব্যবসায় মিতাশা রহমানের স্বামী নূরে আলম সরকারও বিভিন্নভাবে সহায়তা করছেন। অনলাইনে অনেক ক্রেতা দ্বিধায় থাকেন, ছবিতে বা ভিডিওতে দেখা গরুর সঙ্গে বাস্তবের গরুর মিল পাবেন কি না, তা নিয়ে।
এমএ-পড়ুয়া ‘ফ্রেশ অ্যান্ড হেলদি’র উদ্যোক্তা মিতাশা জানান, এবার কম দামের ছোট গরুর চাহিদা বেশি। জেলা পর্যায়ের চাষিরাও গরুর ভিডিও করে পাঠান, তা দেখেই কেনেন তিনি। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কিছু মানুষ থেকে কটু কথা শুনেছিলাম গরু নিয়ে কাজ শুরু করার পর, কিন্তু সবার থেকে সহায়তাও পেয়েছি অনেক বেশি। তাই তো সাহস করে এগিয়ে যেতে পেরেছি।’
নওগাঁর মিরাতুন নেছাও এবার প্রথমবার অনলাইনে গরুর ব্যবসা করছেন। তিনি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছেন। লকডাউনে তাঁর বাবা গরু নিয়ে ঝামেলায় পড়লে তিনি অনলাইনে বিক্রির জন্য উইতে নিবন্ধন করেন। মিরাতুন বললেন, ‘আমাদের গ্রামে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দামের এত বড় গরু কেউ কিনবেন না। তাই অনলাইনই ভরসা।’
মিরাতুনদের গরুটা চোখের সামনে বড় হয়েছে। তার রাগ বেশি হলেও অনেক আদরের গরুটা বিক্রি হয়ে গেলে তাকে ডেলিভারি দিতেও অনেক কষ্ট লাগবে বলে টেলিফোনেই আবেগপ্রবণ হয়ে যান মিরাতুন।
আরেক উদ্যোক্তা রাজশাহীর ফাতেমা তুজ জোহরা বললেন, অনলাইনে ক্রেতারা যেমন দ্বিধায় থাকেন, তেমনি বিক্রেতারাও দ্বিধায় থাকেন। গরু ডেলিভারি দেওয়ার পর ক্রেতা যদি পুরো টাকা না দেন, সে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে ক্রেতারাও গরু হাতে পাওয়ার আগে টাকা পরিশোধ করতে ভরসা পান না। এই উদ্যোক্তা শুকনা খাবার, আমের সন্দেশসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কাজ করছেন।
ফাতেমা তুজ জোহরা সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। অনার্স-পড়ুয়া ফাতেমা বললেন, ‘করোনায় রাজশাহীর অবস্থা খুব খারাপ। খামারিরাও বিপদে আছেন। একদিন একজন খামারিই তাঁর একটি গরু অনলাইনে বিক্রি করে দিতে পারি কি না, তা জানতে চান। তারপরই মনে হয়, এই খামারিদের সহায়তা করতে পারলে মন্দ হয় না। আর এ কাজে তো ইন্টারনেট বিল ছাড়া আমার কোনো খরচও লাগছে না।’
চট্টগ্রামের সানজিদা আফরোজ অনলাইনে কোরবানির গরু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন। বেশ সাড়াও পাচ্ছেন। এ পর্যন্ত সব থেকে বেশি দামÑ দুই লাখ টাকার গরুও বিক্রি হয়েছে। দুজন খামারির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী তিনি অনলাইনে গরু বিক্রি করছেন। ক্রেতারা গরুর ছবি দেখে পছন্দ হলে খামারির সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। গরু বিক্রি হলে তার লাভের একটি অংশ পান সানজিদা। বিবিএ করা সানজিদা অনলাইনে জামদানি বিক্রি করে দেশে-বিদেশে পরিচিতি পেয়েছেন।
পাঁচ বছর ধরে শুদ্ধ কৃষির উদ্যোক্তা কাকলী খান ঈদে কোরবানির জন্য গরু-ছাগল বিক্রি করছেন। গত বছর অনলাইনে ৫২টি গরু বিক্রি করেছিলেন। এবারও ১০০টির বেশি অর্ডার পেয়েছেন। ফেসবুকে পেজের মাধ্যমে ক্রেতারা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আর তিনি দেশি গরুগুলো প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন।
বেসরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি করোনার সংক্রমণের কারণে গত বছর থেকে সরকার ডিজিটাল হাটের আয়োজন করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে এবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন। সহযোগিতায় আছে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল এটুআই-একশপ।

সৌজন্যেঃ প্রথম আলো

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি