৭৫ এর ১৫ আগস্টের ট্রাজেডির পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল প্রস্তুত ছিলো। তারা রাজপথে নামতে প্রস্তুত ছিলো। জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। তৃণমূল একটি নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর পর আওয়ামী লীগের নেতারা ছিলেন দিগভ্রান্ত। কর্মীদের তারা কোন নির্দেশ দিতে পারেননি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং সিলেটে কর্মীরা বিক্ষিপ্ত ভাবে ১৬ এবং ১৭ আগস্ট মিছিল করেছে। কিন্তু নেতারা তাদের চুপ থাকতে বলেছে। আগস্ট ট্রাজেডির সময় তরুণ এরকম বহু আওয়ামী লীগ নেতার সংগে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ১৫ আগস্টের পর জাতির পিতার রক্তের উপর দিয়ে শপথ নিতে যান বঙ্গবন্ধু সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী।
সেই সময়ের স্কুল ছাত্র মির্জা আজম (এখন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) বলেন, মোশতাক রাষ্ট্রপতি হবার পর স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেছিল আওয়ামী লীগই বোধহয় ক্ষমতায় আছে। এখন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে। অল্পদিনের মধ্যেই তাদের ভুল ভাঙ্গে। রংপুরে ১৫ আগস্টের সময় তরুণ এক আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, মোশতাক সহ আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতা যখন মন্ত্রীসভায় যোগ দিলেন তখন আমরা বিভ্রান্ত হলাম। এই সুযোগটিই নিলো মোশতাক। সে ধরপাকড় শুরু করলো।’ রাজনীতি থেকে গুটিয়ে থাকা ৭৫ এর ঐ তরুণ বলেন ‘মোশতাকের লক্ষ্য ছিলো দুটি, এক আওয়ামী লীগকে তার টুপির মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলা। দুই, বিরোধিতাকারীদের জেলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা। মোশতাকের এই দুরভিসন্ধি সফল হয়। একারণেই ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধু হত্যার সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক প্রতিবাদ হয়নি।
৭৫ এ তরুণ ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন ‘ আমরা শুধু একটা নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু সেই নির্দেশ পাই নি।’ নানক বলেন ‘এসময়ে খুনিদের পক্ষে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ বিজয় মিছিল করেছিল। বরিশালে যিনি এই ঘৃণিত অপকর্ম করেছিলেন, তিনি এখনও আওয়ামী লীগের এমপি।’
৭৫ এর পর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেহেতু একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, তাই এরকম সশস্ত্র প্রতিশোধের পথে যেতে অনেক তরুণই আগ্রহী ছিলেন না। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল চেয়েছিল রাজনৈতিক প্রতিরোধ। কিন্তু নেতারা তৃণমূলকে একটি নির্দেশনা পর্যন্ত দিতে ব্যর্থ হয়েছিল।