Warning: Creating default object from empty value in /home/jatioart/public_html/wp-content/themes/NewsFreash/lib/ReduxCore/inc/class.redux_filesystem.php on line 29
আসছে জিঙ্কসমৃদ্ধ চিকন চালের জাত ব্রি-১০০ – দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি
  1. bdweb24@gmail.com : admin :
  2. arthonite@gmail.com : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন

আসছে জিঙ্কসমৃদ্ধ চিকন চালের জাত ব্রি-১০০

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ৬২৯ বার দেখা হয়েছে

জিঙ্কসমৃদ্ধ পাঁচটি জাতের পর এবার আরও চিকন চালের জাত নিয়ে আসছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রির বিজ্ঞানীরা।
ব্রি-৬২, ব্রি-৬৪, ব্রি-৭২, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৪ – এর পর এবার জিঙ্কসমৃদ্ধ নতুন জাত ব্রি-১০০ উদ্ভাবন করেছেন তারা; যে ধানের চাল হবে আরও চিকন, ভাত হবে ঝরঝরে।
ব্রির বিজ্ঞানীরা বলছেন, অন্যান্য ধানের তুলনায় এই ধানের ফলন যেমন বেশি, তেমনিভাবে জিঙ্কের পরিমাণও থাকছে বেশি। উৎপাদনশীলতা পাশাপাশি জিঙ্ক-আয়রণ সমৃদ্ধ ধানের উৎপাদন বাড়িয়ে ভাতের পুষ্টি গুণাগুণ বাড়াতে ব্রির ১৪ বছরের চলমান গবেষণার সর্বশেষ সাফল্য এটি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি ইতোমধ্যে ব্রি ধান-১০০ কে অনুমোদন দিতে জাতীয় বীজ বোর্ডকে সুপারিশ করেছে। ধানের এই নতুন জাত অনুমোদন পেলে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বীজ উৎপাদন শুরু করবেন। বাণিজ্যিকভাবে এ জাত বাজারজাত করা হবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন-বিএডিসির মাধ্যমে।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, পুষ্টিসমৃদ্ধ এই বোরো ধান থেকে অল্প দিনেই ফলন পাওয়া সম্ভব; যা আগামী বর্ষার আগেই ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা। ব্রি-১০০ ধান উদ্ভাবন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবদুল কাদের ব্রি-১০০ ধানের সঙ্করায়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি, সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য ও চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে কথা বলেছেন ।

কৌলিক সারি হল ব্রিডার সিরিজ। এই নাম্বার দেখেই সব দেশের বিজ্ঞানীরা ধানের জাত সম্পর্কে জানতে পারেন। পরবর্তীতে জাতের আপডেট করা হলে এই ব্রিডার সিরিজ নম্বর পরিবর্তন করা হয়।
বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে ২০০৬ সালে বিআর-৭১৬৬-৫বি এর সাথে বিজি ৩০৫ এর সংকরায়ণ করা হয় । আর মাধ্যমে পাওয়া এফ-ওয়ান লাইনটি ২০০৭ সালে ব্রি ধান-২৯ এর সাথে আবারও সংকরায়ণ করা হয় ও পরে ব্রিতে বংশানুক্রম সিলেকশনের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয় নতুন কৌলিক সারি।
সঙ্করায়নের পর মাঠে যখন ধান চাষ করা হয়, তখন একই প্লটের সবগুলো চারার উচ্চতা বা আকার একই রকম হয় না। পরে ধীরে ধীরে সব চারার উচ্চতা প্রায় একই রকম করা হয়, তখন সেটাকে বলা হয় ‘হোমোজাইগাস কৌলিক সারি’। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে নতুন এ জাতের হোমোজাইগাস কৌলিক সারি নির্বাচন করা হয়। পাঁচ বছর ফলন পরীক্ষার পর কৌলিক সারিটি ২০১৭ সালে ব্রির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর গবেষণা মাঠে ও ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়।
পরে ২০২০ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় (পিভিটি) ফলাফল সন্তোষজনক আসে। তখন জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দলের সুপারিশে ধানের জাত হিসাবে ছাড়করনের জন্য আবেদন করা হয়।
এছাড়া অঙ্গজ অবস্থায় গাছের আকার ও আকৃতি ব্রি ধান-৭৪ এর মত। এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্থ ও লম্বা, পতার রং সবুজ। পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০০ সেন্টিমিটার।
গড় জীবনকাল ১৪৮ দিন। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ১৬.৭ গ্রাম। চালের আকার আকৃতি মাঝারি চিকন এবং রঙ সাদা। ভাত হয় ঝরঝরে।
ব্রি-১০০ ধানের প্রতি কেজি চালে জিঙ্কের পরিমাণ ২৫ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম। দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৬.৮ শতাংশ। এছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
২০১৪ সালে অনুমোদন পাওয়া জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধান ব্রি-৭৪ এর জীবনকাল ১৪৫-১৪৭ দিন। ব্রি-১০০ এর জীবনকাল ১৪৮ দিন।
প্রতি হেক্টরে ব্রি-৭৪ ধানের ফলন হয় ৭ দশমিক ১ মেট্রিক টন থেকে ৮ দশমিক ৩ মেট্রিক টন পর্যন্ত। ব্রি-র বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, নতুন ধান ব্রি-১০০ এর উৎপাদন হবে প্রতি হেক্টরে ৬ দশমিক ৯ মেট্রিক টন থেকে ৮ দশমিক ৮ মেট্রিক টন পর্যন্ত।
আবদুল কাদের বলেন, ব্রি-৭৪ এর চেয়ে ব্রি-১০০ ধানের গুণগত মান ভালো, অর্থাৎ চালের আকৃতি মাঝারি চিকন এবং ব্রি ধান-৮৪ এর চেয়ে ফলন প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি।
১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর- অর্থাৎ অগ্রহায়ণের ১ তারিখ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে বীজ বপন করে ৩৫-৪০ দিনের চারা গাছা ২-৩ টি করে ১৫-২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপন করতে হবে।
আবদুল কাদের বলেন, ব্রি ধান-১০০ এ রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়। তবে রোগবালাই ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে বালাইনাশক প্রয়োগ করা উচিৎ।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক পরিমল কান্তি বিশ্বাস বলেন, “এই ফর্টিফাইড জাতগুলো থেকে প্রত্যাশা অনেক। এ ক্রপগুলোতে যে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলো আছে, তা শিশুদের বেড়ে উঠার জন্য ও ল্যাকটেটিং মাদারদের জন্য খুবই উপকারী।
“আমাদের দেশে সাধারণত ভাতের উপর নির্ভরতা বেশি। নানা খাবার খেলেও দিন শেষে সেই ভাতের চাহিদাই কিন্তু বেশি। তাই ভাতের দিকে আলাদা নজর রাখতেই হবে, যেন এই ভাতের মাধ্যমে জিঙ্ক, আয়রণের মত পুষ্টি উপাদান দেওয়া যায়। ব্রি-১০০ ধান নিয়ে খোঁজ নিয়ে জানলাম, এই ধানের চালটাও হবে অন্য সব ধানের চেয়ে চিকন, প্রোটিনের পরিমাণও থাকছে বেশি।”
অধ্যাপক পরিমল কান্তি বলেন, “এই ধানটি সব জায়গায় আবার চাষ করা যাবে না। চাষ করতে হবে মাঝারি নিচু জমিতে। যেখানে ভালো সেচ সুবিধা আছে, সেখানে চাষ করতে হবে। তবে এটা ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ এর যে জমি আছে, সে জমিতেই চাষ করা যাবে।”
ব্রি-১০০ ধানের অনুমোদনের বিষয়টি অনেকটা এগিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগের মহাপরিচালক বলাই কৃষ্ণ হাজরা।
তিনি বলেন, “আমরা জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানটির বিষয়ে আগামী সপ্তাহে বৈঠক করব। এখানে ধানটির গুণাগুণ, চাষাবাদ পদ্ধতি ও পোকামাকড় আক্রমণের সম্ভাবনা কেমন ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে তারপর অনুমোদন প্রক্রিয়ায় যাব। তবে এটার অনুমোদন পেতে খুব বেশি দিন সময় লাগবে না।”

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি