আবু তাহের বাপ্পা : দূর্নীতি, স্বজন প্রীতি, ও অনিয়মের আঁখড়ায় পরিনত হয়েছে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী আহম্মেদ বাওয়ানী স্কুল ও কলেজটি। প্রধান শিক্ষকের নানা দূর্নীতি স্বজন প্রীতি আর নিয়ম ভঙ্গে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে এখন বাইরের ভাড়াটিয়াদের আড্ডা ও নানামুখি বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। সেই সাথে প্রধান শিক্ষকের অর্থ আয়ের বিশাল এক হাব হয়ে উঠেছে স্কুল ক্যাম্পাস।
অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, নিজের ইচ্ছেমতো তিনি চালাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের গর্ভনিং বডির চেয়ারম্যান স্থানীয় সংসদ হাজী সেলিমের ছেলে। অধ্যক্ষ মোর্শারফ মুন্সি মুকুল নিজেকে পরিচয় দেন সংসদ হাজি সেলিমের রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে। বাবার রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যক্ষের কোন কাজেরই খেয়াল রাখেন না গর্ভনিং বডির চেয়ারম্যান। সেই সুযোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে তিনি দূর্নীতি আর নিজের আখের গোছানোর দাবার কোটে পরিনত করেছেন। তথ্যমতে, ২০২০ সালের মে থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পিএফ ফান্ডের টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। এ টাকার পরিমাণ কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা। অনেক শিক্ষক পিসএফ ফান্ডের উপর ব্যাংক লোন নিয়ে থাকেন সে সুযোগ থেকে তারা দীর্ঘ সময় বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে এক ধরণের হতাশা ঘিরে থাকলেও ভয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না কেউ। এ দিকে বিশাল অংকের এ টাকা কোথায় ব্যয় হলো তারও কোন হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে কথা বলতে গেলেই শিক্ষক কর্মচারিদের সাথে চরম খারাপ ব্যবহার করেন তিনি। করোনাকালিন সময়ে শিক্ষক কর্মচারিদের পিএফ ফান্ডের টাকা কাটার পাশাপাশি দুর্যোগপূর্ণ করোনার মাঝে তিনি নতুন শিক্ষক কর্মচারি নিয়োগ দিয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন। এসব শিক্ষকদের বেশীর ভাগেরই এনটিআরসি সনদ নেই বলে জানা গেছে। করোনাকালিন সময়ে যখন স্কুলবন্ধ তখন কেন এত বিপুল পরিমান শিক্ষক কর্মচারি নিয়োগ দেয়া হলো আবার কর্মরত শিক্ষকদের পিএফ ফান্ডের টাকা কেন কেটে নেয়া হলো এবং দীর্ঘ সময়ে কেন তা সমন্বয় করা হলো না এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ জানান, যা করা হয়েছে তা নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। এর বেশী কিছু বলতে নারাজ তিনি।
সূত্র বলছে করোনাকালিন সময়ে যে সকল শিক্ষক কর্মারি তিনি নিয়োগ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে কম পক্ষে থেকে চার লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এ কারণে শিক্ষক হওয়ার পূর্ব শর্ত এনটিআরসি সনদকেও এড়িয়ে গেছেন তিনি। এসব টাকায় তিনি রাজধানীর ৬১ ইসলামপুরে শ্বশুরের জমির উপর বহুতল ভবন নির্মাণের পাশাপাশি জিন্দাবাজার প্রসন্ন পোদ্দার লেনের পর্বত মিয়ার বাড়ীতে কিনেছেন কোটি টাকা মূল্যের প্লট। সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজের আধিপাত্য বজায় রাখতে তিনি ননএমপিও শিক্ষকদের শিফ্ট ইনচার্জ করাসহ নানা অনৈতিক সুবিধা দিয়ে সিনিয়র শিক্ষকদের অবদমন করার নীতি গ্রহণ করেছেন। এতে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস দেখাচ্ছে না। এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানিক তদন্ত চেয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজিসহ আঞ্চলিক সহকারি পরিচালক, জেলা শিক্ষা অফিসারের বরাবর একাধিত অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষদের অনেকেই।
এ দিকে কলেজ শাখায় দীর্ঘ সময় ধরে প্রাপ্যতা থাকার পরও শিক্ষকদের এমপিও ভূক্তির জন্য কোন প্রকার উদ্যোগ না নিয়ে প্রাপ্যতা না থাকার পরও রেজাল্ট টেম্পারিং ও জালিয়াতি করে স্কুল শাখার শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে তিনি এমপিও আবেদন পাঠিয়েছেন। সম্প্রতি একই বাংলা বিষয়ে ৩জন শিক্ষকের এমপিও আবেদন পাঠান অধ্যক্ষ। এসব আবেদন অসঙ্গতি পূর্ণ হওয়ায় তা আটকে দিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল মজিদ জানান, এসব আবেদন পাঠানো ঠিক হয়নি। আমাদের কাছে এগুলো ত্রুটিপূর্ণ মনে হওয়ায় আমরা তা আটকে দিয়ে এ বিষয়ে ব্যাখা চেয়েছি।
উল্লেখ্য এর আগে সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিও নিয়েছেন একই স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক সাইফুল বিশ্বাস। সে এমপিওর বিরোধীতা করে শিক্ষামন্ত্রণালয় ডিজি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট সকল মাখায় অভিযোগ নিয়েছেন একই স্কুলের একাধিক শিক্ষক । এ বিষয়ে ঢাকা আঞ্চলিক উপপরিচালক সাহারা বেগম জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ আমরা পেয়েছি । বিষয়টাতে অবশ্যই আমরা তদন্তে যাব। এ দিকে অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, আহম্মেদ বাওয়ানী স্কুল এন্ড কলেজ অধ্যক্ষের সকল অপকর্মের দোসর হয়ে কাজ করেছে আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারি মোঃ নাসির উদ্দিন। এই নাসির উদ্দিন পূর্বেও নানা অপকর্মের কারণে জেল খেটেছেন। সেই সাথে অফিস সহকারি থেকে তার চাকুরি অবদমন করে তাকে হিসাব সহকারি করা হয়। কিন্তু জেলা শিক্ষা অফিসে পদায়ন নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এ অফিসে বসেই তিনি পূর্বে বহু অপকর্মের জন্ম দিয়েছেন। জেল খেটে এসে পদ অবদমন হলেও তিনি স্বভাব পাল্টননি। বরং তা বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েক গুন। এ সব বিষয়ে আহম্মেদ বাওয়ানী স্কুল এন্ড কলেজের অভিভবকদের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তদন্তসহ প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষায় কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ চান তারা।
তথ্য অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি অফিস সহকারি আব্দুর রহিমের এমপিও ভূক্তিতে বড় ধরণের জাল জালিয়াতি ও ঘুষ বাণিজ্যে জড়িয়েছেন প্রিন্সিপ্যাল মোর্শারফ হোসেন মুন্সি মুকুল। অভিযোগ উঠেছে, আব্দুর রহিমের নিয়োগের সমস্ত প্রক্রিয়া হয়েছে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে। স্কুলের চাহিদা, নিয়োগের বোর্ড গঠন, সেখানে সরকারি কর্মকর্তার উপস্থিতি বা পত্রিকায় বিজ্ঞাপর প্রচারের কোন শর্তই মানা হয়নি এ নিয়োগে। অভিযোগ হচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সকল স্তরের কাগজপত্র জাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রিন্সিপ্যাল নিজে তৈরী করেছেন।