ঈদ সামনে রেখে বিধিনিষেধ শিথিলের প্রথমদিনেই গাবতলীতে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল নেমেছে। করোনার সংক্রমণের বিপদ উপেক্ষা করেই নাড়ির টানে বাড়ির পথে রওনা হওয়া মানুষেরা ভিড় করছেন গাবতলীতে।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জুলাই মাসের শুরু থেকে দেশজুড়ে ছিল কঠোর লকডাউন। এর আওতায় দূরপাল্লার বাস চলাচল ছিল বন্ধ।
এরআগে ঈদুল ফিতরে মানুষের বাড়ি ফেরা ঠেকাতে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু তাতে মানুষের ঢল ঠেকানো যায়নি। যে যেভাবে পেরেছিলেন গ্রামের বাড়ির পথে রওনা হয়েছিলেন ওই ঈদে। সে অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এবার ঈদের আগে বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে আবার বিধিনিষেধে ফিরবে দেশ।
গাবতলীতে ঈগল পরিবহন কাউন্টারের ম্যানেজার শিমুল বলেন, ভোর থেকেই যাত্রী নিয়ে বাস ছেড়ে গেছে এবং ঢাকায় এসেছে। গতকাল প্রায় বেশিরভাগ টিকিট বিক্রি করেছি। আজও সকাল থেকে টিকিট বিক্রি করছি। ঈদের আগ পর্যন্ত আমাদের বেশিরভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায় মানুষের উপপেচড়া ভিড়। দূরপাল্লার বাস চালু হওয়াতে যাত্রীদের মনে স্বস্তি নেমে এসেছে। টার্মিনাল থেকে মাইকে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায়ের কথা বলা হচ্ছে।
এই টার্মিনালে গোপালগঞ্জের বাস ধরতে এসেছেন সাব্বির নামে একজন। বড় বোনকে সাথে নিয়ে রওনা হয়েছেন তিনি। বাসের টিকিট পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গোল্ডেন লাইন বাসের টিকিট পেয়েছি। ভাড়া ৬০ শতাংশ হারে বেশি নিয়েছে। আট দিনের জন্য হলেও বিধিনিষেধ শিথিল করায় সরকারকে ধন্যবাদ।
মো. সাদেক নামে আরেক যাত্রী জানান তিনি যাবেন মাগুরা। তিনি বলেন, এতদিন গাড়ি চলাচল না করায় বাড়ি যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। তবে সরকারের লকডাউন শিথিল করায় স্বস্তি এসেছে মনে। কারণ, আমি গত ঈদেও বাড়িতে যেতে পারিনি। তাছাড়া অনেকদিন ধরে বাড়িতে যাই না। সরকারের ঘোষণা আসায় আমি খুশি হয়েছি। গতকাল গাবতলী এসে বাসের টিকিট নিয়ে গেছি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে এক সিট ফাঁকা রেখে, ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চলাচল করবে। ঈদ উপলক্ষে বুধবার সরাসরি ও অনলাইনে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। বাস মালিকদের সরকারি নির্দেশনা মেনেই পরিবহন চালু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় পাটুরিয়া-দৌতলদিয়া নৌপথে বাড়তে শুরু করেছে যানবাহনের সংখ্যা। সকাল থেকেই পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় রাজধানী ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এসব যানবাহনকে ছোট-বড় ১৫টি ফেরি দিয়ে পারাপারে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ২৫০ সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক, বাস মিলে তিন শতাধিক যানবাহন নৌপথ পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়িগুলো ঘাটে আসা মাত্রই ফেরিতে উঠে যাচ্ছে আর দক্ষিণাঞ্চমুখী যাত্রীর সংখ্যা কম বলে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম মো. জিল্লুর রহমান।
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখী মানুষের চাপ বেড়েছে। সেই সঙ্গে যানবাহনের চাপও রয়েছে। ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় ৫ শতাধিক যানবাহন রয়েছে।
যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটেও। নদীতে তীব্র স্রোত ও পশুবাহী ট্রাকের চাপে এ ঘাটে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন শিথিল হওয়ার পর থেকেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার নামে পরিচিত দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ঘরমুখী যাত্রীর ভিড় লক্ষ করা গেছে।