1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২২ অপরাহ্ন

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের ব্যয় বাড়ছে

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৮০০ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : এ বছরও পিছু ছাড়েনি দুর্যোগ। চলতি বছর একুশ শতকের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। রোগব্যাধি বেড়েই চলেছে। বাড়ছে নদী ভাঙন, কমছে নদ-নদীর নাব্যতা। বারংবার ঘূর্ণিঝড়ের হানা। রয়েছে ভূমিকম্পেরও ঝুঁকিও। এবার দিনের পর দিন সাগরের পানির নিচে ছিল উপকূলীয় বিভিন্ন অঞ্চল। বাড়ছে লবণাক্ততা। বেড়েছে বৃষ্টিপাতের অনিয়মি। বজ্রপাতও বেশি হচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়াসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত এ জনপদ। এসব দুর্যোগে ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে, রাস্তাঘাট বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষতি হচ্ছে, ফসল নষ্ট হচ্ছে, মৃত্যুসহ নানামুখি বিপদে বাংলার মানুষ। সেইসাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগের এসব প্রভাব মোকাবিলায় সরকারের ব্যয়ও বাড়ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন দিচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। তার মধ্যে গত ৩ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৩টি একনেক সভায় মোট ৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও এর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় এই ৪ প্রকল্পে সরকার খরচ করবে মোট ৮ হাজার ৫৯৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যার পুরো অর্থ বহন করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি প্রচুর কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি করেছে শিল্পোন্নত দেশগুলো। তার নানান নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপর। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী, এসব দুর্যোগ মোকাবেলার খরচ উন্নত দেশগুলোর দেয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের জলবায়ু মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না থাকায় তা পাওয়া যাচ্ছে না। নিজেদের সীমিত অর্থ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় খরচ করছে সরকার।
সরকারের সংশ্লিষ্টরাও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে তেমন কিছু বলতে পারছেন না। তবে তারা বলছেন, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় এখন বেশি অর্থ খরচের পরিকল্পনা সরকারের আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে আগামী ১০ থেকে ২০ বছরে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তার একটা চিত্র গবেষণার মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে না নিয়ে সেসব ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট প্রকল্প নিলে প্রাপ্য সেই অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশ পাবে। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যমতে, সর্বশেষ তিনটির মধ্যে ৩ নভেম্বরের একনেকে সভায় ‘যমুনা নদীর ডানতীর ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলাধীন সিংড়াবাড়ী, পাটাগ্রাম ও বাঐখোলা এলাকা সংরক্ষণ’ প্রকল্পে ৫৬০ কোটি ৭ লাখ টাকা। ১৭ নভেম্বর একনেকে ‘যমুনা নদীর ডানতীরের ভাঙন হতে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলাধীন কাতলামারী ও সাঘাটা উপজেলাধীন গোবিন্দি এবং হলদিয়া এলাকা রক্ষা’ প্রকল্পে ৭৯৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন’ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫ হাজার ৯০৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে, এতে খরচ হবে ১ হাজার ৩৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যয় বাড়ছে। কারণ বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনে এগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্যই বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে এই রাস্তাগুলোর পূর্ণ আকৃতি করা হচ্ছে, পুনর্বাসন করা হচ্ছে, খাল-নদীগুলোকে ড্রেজিং করা হচ্ছে, নতুন জলাধার নির্মাণ করা হচ্ছে, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পুকুর খনন করা হচ্ছে, জলাশয়গুলোকে পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। এগুলো আমাদের ব-দ্বীপ পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু উষ্ণতা বাড়ছে, বৃষ্টিপাতের অনিয়ম বেড়েছে। কাজেই আমাদেরকে কিছু কার্যক্রম নিতে হচ্ছে। আমাদের সক্ষমতাও বেড়েছে। সড়ক ও জনপথ নতুন করে আর তৈরির প্রয়োজন নেই। যথেষ্ট সড়ক ও জনপথ হয়েছে। এখন এগুলোকে আমরা প্রশস্ত করছি, ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করছি। সেই সড়ক ও জনপথের যে বিপুল ব্যয়, সেগুলো তো এখন লাগছে না। অনেক ব্রিজ হয়ে গেছে, সেগুলোও আর লাগছে না। এখন ক্রমান্বয়ে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলার কর্মসূচিগুলো প্রধান্য পাবে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীকে ফোন করা হালে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সদস্য ও বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ‘আমি কমিটিতে আসার পর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ইতোমধ্যে কী পরিমাণ ব্যয় হয়েছে, সেই চিত্র এখনও হাতে পুরোপুরি পাইনি। কারণ যখন আমরা সভার কার্যক্রম শুরু করছিলাম, তার পরপরই করোনার আর্বিভাব ঘটার কারণে আমাদের প্রায় সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল। তাই পরিপূর্ণ চিত্র পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, এটা নিয়ে আমরা স্থায়ী কমিটিতে বিশদভাবে আলোচনা ও পর্যবেক্ষণ করে চলেছি। বজ্রপাত, দীর্ঘমেয়াদী বন্যা, নদী ভাঙন, ঘূর্ণিঝড় – সকল প্রকার যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে এগুলোর ওপর আমাদের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা আছে এবং আমরা গভীর পর্যবেক্ষণের মধ্যে রেখেছি যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চেষ্টা ও চিন্তাভাবনা আছে। যাতে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে আমরা টিকে থাকতে পারি, বাংলাদেশকে নিরাপদ রাখা যায়। সম্প্রতি করোনার প্রভাবে সব পরিকল্পনাও স্থবির হওয়ার মতো।’
ঠিক কী কী পরিকল্পনা নিয়েছেন জানতে চাইলে রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ‘যে সমস্যা যেভাবে আসে, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেটাকে মোকাবিলা করি। যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাকে সময় দিতে হবে এবং আমার অফিসে আসতে হবে।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ার বিষয়টি সবাই ওয়াকিবহাল আছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতিও বেড়েছে। আম্পান, মহামারি, বন্যা তো ওভারকাম করতেই হচ্ছে। আমরা একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই আছি। এগুলো মোকাবিলা করার জন্য ফান্ড লাগে। আমরা চাই ফান্ডটা যেন জনস্বার্থে লাগে। মাঠের পর মাঠ ফসল নষ্ট হয়ে গেল। কৃষকরা কোথায় পড়লেন! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক। তিনি সেটাকে মোকাবিলা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর খেয়ালে কোনো কার্পণ্য নেই। তিনি অনেক সচেতন। বাস্তবায়নের জন্য তৎপতর।’
বিশেষজ্ঞের অভিমত : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাসহ বেশকিছু পরিকল্পনা/পরামর্শ তুলে ধরেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন ইউনিটের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম. জাকির হোসাইন খান।
তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরের সঙ্গে তার আগের ১০ বছরের তুলনা করলে দেখা যাবে ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এমনকি বছরে একাধিকবার আসছে। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম উপসর্গ। সামনের দিনগুলোতে এটা আরও বাড়বে। কারণ আজকে সারা পৃথিবীতে কার্বন নিঃস্বরণ বন্ধ করে দিলাম। তারপরও যে ক্ষতি ইতোমধ্যে হয়ে গেছে, তাতে এটা বাড়বে। দুর্যোগ আরও বাড়বে সেটা ধরে নিয়েই এখন থেকে আমাদেরকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রকল্পগুলো নেয়ার ক্ষেত্রে আগে যথার্থভাবে জানা দরকার আগামীতে আমাদের দুর্যোগের পরিমাণ কতটা বাড়বে। এটা সম্পর্কে আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য আছে কি না। যদি বিনিয়োগ করতে যান, আগে দেখতে হবে না এখানে যথার্থভাবে কী ধরনের ঝুঁকি আছে। ঝুঁকি অনুযায়ী পরিকল্পনা নিতে হবে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনে যে প্রকল্পগুলো নেয়া হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যথার্থ ঝুঁকি যাচাই করা হচ্ছে না।’
যেকোনো প্রকল্পের পরিবেশগত, সাংস্কৃতিক, সামাজিক একটা প্রভাব আছে উল্লেখ করে জাকির হোসাইন খান বলেন, ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তির ৭ দশমিক ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, যেকোনো অভিযোজন স্থানীয় নাগরিক বান্ধব হতে হবে। স্থানীয় লুকায়িত জ্ঞান নিতে হবে। স্থানীয় প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশকে অবশ্যই মর্যাদা দিতে হবে। এটা মানার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ এর ‘ক’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, পরিবেশ সুরক্ষার অঙ্গীকার রয়েছে। যেকোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে এই সবগুলো বিষয় আমরা পরিমাপ করছি কি না। আজকে আম্পানে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা তো হওয়ার কথাই। আমরা জানতাম না যে, বাঁধগুলো যদি ভালোভাবে না করা হয়, বাঁধে যদি দুর্নীতি করা হয় বা বাঁধ যদি যথাযথভাবে উঁচু না করা হয়, তাহলে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করবে। তাহলে কেন পদক্ষেপ নেইনি? গত ১০ বছরে দেখা গেছে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে কম অর্থ গেছে। সবচেয়ে বেশি অর্থ গেছে যেসব অঞ্চলে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মন্ত্রী/এমপিরা আছেন। তাহলে সেটা কেন গেল? আম্পানে ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর জন্য যে প্রকল্প নিয়েছে, এখানে যে যথাযথভাবে ঝুঁকি এসেসমেন্ট করে প্রকল্প গ্রহণ এবং যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদেরকে টার্গেট করে অর্থায়ন করছে, সেটার নিশ্চয়তা কোথায়?’
জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় কমিউনিটি নেতৃত্বাধীন অভিযোজন প্রকল্প নেয়ার পক্ষে মত দেন টিআইবির জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন ইউনিটের সিনিয়র এ প্রোগ্রাম ম্যানেজার। তিনি বলেন, ‘ঝুঁকি অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে বিষয়টা জরুরি সেটা হলো যেসব বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করা হয়, সেগুলোর জন্য হয়তো দক্ষ জনবল লাগে। কিন্তু সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ, বাঁধ নির্মাণ, একটা বনায়ন করা – এগুলো কিন্তু স্থানীয় লোকজন দিয়ে করানো সম্ভব। তাহলে কেন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে কমিউনিটি নেতৃত্বাধীন অভিযোজন প্রকল্প কেন নেয়া হচ্ছে না? আজকে যে বাঁধটা তৈরি করতে দুর্নীতি হচ্ছে, সেই বাঁধটা তিনভাগের একভাগ টাকা দিয়ে কমিউনিটি তৈরি করে ফেলতে পারতো। তাদেরকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে দিলে, বিভিন্ন বাঁধের ওপর বনায়ন করার সুযোগ দিলে বা অন্যান্য কিছু করার সুযোগ দিলে; তখন তারাই বাঁধ রক্ষা করবে। আমরা সেটা করতে চাচ্ছি না কেন? মানে এখানে দুর্নীতি একটা ফ্যাক্টর। মুশকিলটা হলো এই যে পরিকল্পনাগুলো নেয়া হচ্ছে উপর থেকে, কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে অর্থগুলো যথাযথভাবে এসেস করার জন্য স্থানীয় নাগরিকদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটিকে নেতৃত্ব দিয়ে অভিযোজন কার্যক্রম নেয়ার ব্যাপারে সরকারের এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখছি না।’
যারা ক্ষতি করেছে বা শিল্পোন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ক্ষতিপূরণ/অনুদানের অর্থ পাওয়ার অধিকার বলেও জানান জাকির হোসাইন খান। তিনি মনে করেন, আগামী ১০ বছরের পরিকল্পনা হাতে নিতে পারলে বিদেশি উৎস সবুজ জলবায়ু তহবিল কিংবা অন্যান্য তহবিল থেকে অর্থটা পাওয়া যাবে।
জাকির হোসাইন বলেন, ‘প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, এই জাতীয় অর্থ দেবে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলো। কেন আমাদের সীমিত অর্থ ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় খরচ করবো? যারা ক্ষয়ক্ষতি করেছে, তারা দেবে অর্থ। অথচ সেই জায়গায় আমরা কেন বড় ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি না। সপ্তম পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনায় জলবায়ু অর্থায়ন কৌশল হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয় নাই।’
‘প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, তারা অর্থ দিতে বাধ্য। এখন যদি সরকার অর্থ পেতে চায়, তাহলে তো যথার্থভাবে পরিমাপ করে দেখাতে হবে যে, এই পরিমাণ ঝুঁকি আমাদের আছে, এই পরিমাণ মানুষ আমাদের বাস্তুচ্যুত হবে, এই পরিমাণ কৃষির ক্ষতি হবে। সেই এসেসমেন্ট করে প্রকল্প করে জমা দিতে হবে। তাহলে দেখা যাবে, তারা সেই প্রকল্পগুলোয় অর্থায়ন করবে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে প্রস্তুতি নিতে হবে। অর্থের যথাযথ ব্যবহারও প্রমাণ করতে হবে যে, দুর্নীতিমুক্ত উপায়ে স্বচ্ছতার সাথে অর্থ ব্যবহারে আশ্বস্ত করতে হবে। সেই ব্যবস্থা সরকার নিচ্ছে না কেন? মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অনুদানভিত্তিক নেয়ার সুযোগ আছে, কেন আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি না?’ প্রশ্ন জাকির হোসাইনের।
এ ধরনের কোনো পরিকল্পনার বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন ও মো. রেজাউল করিম বাবলু। তবে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেছেন, জলবায়ু মোকাবিলাকে কেন্দ্র করেই ব-দ্বীপ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি