1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৬ অপরাহ্ন

বিনামূল্যের পাঠ্যবই: সময়মতো বিতরণ নিয়ে সংশয়

রিপোর্টার
  • আপডেট : রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৭২৮ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক  : প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিনামূল্যের পাঠ্যবই নির্ধারিত সময়ে বিতরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাগজ ছাড়া মুদ্রণের ছাড়পত্র না পাওয়া, ছাপার পর বই সরবরাহের অনুমতিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বই বিতরণে বিলম্ব হতে পারে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ বইয়ের ছাপার কাজ আটকে আছে। তাই চলতি বছরে সবমিলিয়ে ৬০ শতাংশের বেশি বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় পৌঁছানো সম্ভব হবে না।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছেন, এই বছর মোট সাড়ে ৩৪ কোটি বই ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিকের প্রায় ২৪ কোটি ৩৪ লাখ। বাকিটা প্রাথমিক স্তরের। গত সপ্তাহ পর্যন্ত উভয় স্তরের মাত্র ২৪ শতাংশ বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকের সাড়ে ৫ কোটি এবং মাধ্যমিকের রয়েছে পৌনে ৩ কোটি বই।
মুদ্রাকরদের অভিযোগ, সবচেয়ে বেশি সংকট মাধ্যমিকের বই নিয়ে। এই স্তরের বইয়ের দরপত্রের মূল বৈশিষ্ট্য দুটি। একটি হচ্ছে, সাড়ে ৫ কোটি বইয়ের কাগজ এনসিটিবি সরবরাহ করেছে। এই বই নিয়ে সংকট কেবল প্রচ্ছদ। এতে জাতীয় ব্যক্তিদের ছবি থাকায় ধীরগতিতে ছাপাতে হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এসব বইয়ের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ছাপা কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু মূল সংকট তৈরি হয়েছে মাধ্যমিকের বাকি পৌনে ১৯ কোটি বই নিয়ে। মুদ্রাকররা বাজার থেকে কাগজ কিনে এসব বই ছেপে থাকেন।
তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান পদে পদে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। বিশেষ করে নির্দিষ্ট কয়েকটি মিলের কাগজ না কিনলে বই মুদ্রণের ছাড়পত্র মিলছে না। কাগজ পরীক্ষায় বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ওপর নেতিবাচক মন্তব্য করছেন তারা। এতে ৫০টির মধ্যে অন্তত ৩৫ প্রতিষ্ঠানের কাগজেই নেতিবাচক মন্তব্য দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অন্তত আড়াই হাজার মেট্রিক টন কাগজ বাতিল করা হয়েছে।
মুদ্রাকরদের দাবি, এনসিটিবি যে মানের (জিএসএম) কাগজ দিতে বলেছে, তার থেকে ২ শতাংশ কম-বেশি গ্রহণযোগ্য হিসেবে দরপত্রেই উল্লেখ আছে। কিন্তু দশমিক ১-২ শতাংশ কম হলেও কাগজ বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে।
আটটি মানদ- পরীক্ষা শেষে কাগজ ছাড়পত্র পায়। এগুলো হচ্ছে, জিএসএম (কাগজের পুরত্ব), উজ্জ্বলতা, বার্স্টিং (কতটুকু টানে ছেঁড়ে) শক্তি, পাল্প (কাগজের কাঁচামাল), সাইজিং (ছাপানোর পর কালি লেপ্টে যায় কি না), বাল্ক (পুরত্ব ও ওজনের সমন্বয়), আর্দ্রতা ও অপাসিটি (ছাপানোর পর কালি অন্য পাশে দেখা যায় কি না)। তবে প্রথম তিনটিতে কাগজ কাক্সিক্ষত শর্ত পূরণ করছে না বলে প্রতিবেদন আসছে বেশি।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, ‘বই ছাপানোর এই দুরবস্থার মূল কারণ তিনটি। এগুলো হচ্ছে—কাগজ, অনুমোদন ও নতুন প্রচ্ছদ। অন্যান্য বছর পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান বই মুদ্রণ শেষে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে যাচাই করে মাঠপর্যায়ে পাঠানোর অনুমতি দিতো। কিন্তু এবার প্রত্যেকটি বই এনসিটিবির সম্পাদনা শাখা থেকেও আলাদা ছাড়পত্র প্রয়োজন হচ্ছে। এতে তৈরি হচ্ছে আমলান্ত্রিক জটিলতা। ফলে অনুমোদন পেতেও দেরি হচ্ছে।
তোফায়েল খান বলেন, ‘এবার মাধ্যমিকের বইয়ের প্রচ্ছদের ভেতরে দুই পৃষ্ঠায় জাতীয় ব্যক্তিদের ছবি যাচ্ছে। স্পর্শকাতর হওয়ায় সতর্কতার সঙ্গে ছাপাতে হচ্ছে। কারণ, ছবি নিয়ে কোনো ধরনের আপত্তি উঠলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিপাকে পড়তে পারে। এ কারণে আগের চেয়ে দ্বিগুণ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনগুণ সময় লাগছে প্রচ্ছদ ছাপাতে।’
তোফায়েল খান বলেন, ‘সংকট কাটাতে এই মুহূর্তে বিনা শুল্কে কাগজ আমদানির অনুমতি দরকার। এখন কাগজ ও বইয়ের ছাড়পত্রের ব্যাপারে আমরা এনসিটিবির সঙ্গে বৈঠক করবো। কারও লোভের কারণে যেন কোমলমতি শিশুদের বই বিঘিœত না হয়, সেটা অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘প্রাথমিক স্তরের বইয়ের কাজ ভালোই চলছে। কিন্তু কাগজ সংক্রান্ত জটিলতায় আশানুরূপ এগুতে পারছি না। তবে মুদ্রাকরদের অনুরোধ করেছি, দরপত্র অনুযায়ী তারা যে সময়ই পান না কেন, ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।’
বইয়ের তদারকির মূল দায়িত্ব পালনকারী এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘বইয়ের কাগজের ব্যাপারে মুদ্রাকররা মৌখিকভাবে বিভিন্ন কথা বলে গেছেন। কিন্তু কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে মৌখিক হলেও বইয়ের স্বার্থে অভিযোগ খতিয়ে দেখবো।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুককে মোবাইলফোনে একাধিকবার কল দিলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএম মনসুরুল আলম বলেন, ‘সব সমস্যা কাটিয়ে চলতি মাসের মধ্যেই সব বই পৌঁছাতে পারবো। ইতোমধ্যে আমাদের ৪০ শতাংশ বই স্কুল পর্যায়ে চলে গেছে। ৬০ শতাংশের বেশি বই ছাপা হয়ে গেছে। কাজ চলছে। বাকি বইয়ের কাজ দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।’ বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি