Warning: Creating default object from empty value in /home/jatioart/public_html/wp-content/themes/NewsFreash/lib/ReduxCore/inc/class.redux_filesystem.php on line 29
ভাঙতে হবে জেনেও দুই সেতুর কাজ চলছে – দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি
  1. bdweb24@gmail.com : admin :
  2. arthonite@gmail.com : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
উপজেলা নির্বাচন মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতেও ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী কেউ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি: প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যুগোপযোগী কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে : রাষ্ট্রপতি জেলে থাকা নেতাকর্মীর সংখ্যা নিয়ে বিএনপিকে কাদেরের চ্যালেঞ্জ শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনায় মসৃণভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন : মার্কিন থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক বছর ঘুরে আবারও এলো পহেলা বৈশাখ ফিলিস্তিনসহ সকল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান রাষ্ট্রপতির শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত যশোরে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা, দাম বেশি রাখার অভিযোগ

ভাঙতে হবে জেনেও দুই সেতুর কাজ চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ১ মার্চ, ২০২১
  • ২৭৯ বার দেখা হয়েছে

ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথ চালু করতে কম উচ্চতার ১৬টি সেতু ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা করছে সরকার। কিন্তু বৃত্তাকার নৌপথ এলাকার মধ্যেই এখন কম উচ্চতার আরও দুটি সেতু নির্মাণ করছে সরকারেরই দুই সংস্থা।
একটি টঙ্গীতে তুরাগ নদের ওপরে কামারপাড়া সেতু। এটি নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। দ্বিতীয়টি রেলসেতু। টঙ্গীতেই তুরাগের ওপর এই সেতু নির্মাণ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেতু দুটি নির্মাণে প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। যে উচ্চতায় সেতু দুটি নির্মিত হচ্ছে তাতে এর নিচ দিয়ে বর্ষায় নৌযান চলাচল করতে পারবে না। ফলে বৃত্তাকার নৌপথ চালু করতে হলে দুটি সেতুই ভাঙতে হবে। অথবা বৃত্তাকার নৌপথ চালু হওয়ার পর সেতু দুটির কাছাকাছি গিয়ে হয় যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হবে নয়তো কোনোভাবে সেতু পার করে আরেকটি নৌযানে তুলে দিতে হবে যাত্রীদের।

রাজধানীতে যানবাহনের চাপ কমাতে চারপাশ ঘিরে বৃত্তাকার নৌপথ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয় দুই দশক আগে, ২০০০ সালে। কথা ছিল, এই নৌপথ দিয়ে ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সহজে যেতে পারবে মানুষ। বৃত্তাকার নৌপথে ২০০৪, ২০১০, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে চার দফা ওয়াটার বাস ও লঞ্চ নামানো হয়েছিল। তবে সব কটি অল্প দিন পর বন্ধ হয়ে যায়। এখন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আবার বৃত্তাকার নৌপথ চালুর চিন্তা করছে। এ জন্য উচ্চতা কম থাকা ১৬টি সেতু ভেঙে নতুন করে নির্মাণের চিন্তা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্যানুযায়ী, ঢাকা শহরের চারদিকে বৃত্তাকার নৌপথে ২১টি সড়ক ও রেলসেতু রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি সেতুরই উচ্চতা কম। সেতুগুলো নির্মাণ করেছে সওজ, রেলওয়ে এবং স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর।

বৃত্তাকার নৌপথে সেতুর কম উচ্চতার বিষয়টি আলোচনায় আসে ২০১৯ সালে। তখন বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদী-নদের ওপর নির্মিত এসব সেতুর উচ্চতা ‘স্ট্যান্ডার্ড হাই ওয়াটার লেভেল’ (পানির উপরিভাগের সর্বোচ্চ স্তর থেকে সেতুর নিচের কাঠামো পর্যন্ত দূরত্ব) অনুযায়ী পরিমাপ করে সরকারের একটি কমিটি।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, সেতু নির্মাণকারী সংস্থাগুলো নৌযান চলাচলের কথা বিবেচনা করেনি। এ ছাড়া আগের সরকার বা বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকেও নৌপথ সচল করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, পুরো নৌপথের সুবিধা নিতে উচ্চতা কম থাকা সেতু ভেঙে ফেলতে হবে।

সরকারি দুটি সংস্থার সমন্বয়হীনতার পরিণতি কি সেটি দেখা গেছে পটুয়াখালীতেও। সেখানে আন্ধারমানিক নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের পর এখন আরেকটি সেতুর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এলজিইডি ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে যে সেতু নির্মাণ করেছে তা ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী নয়। এখন আগের সেতুর তিন কিলোমিটার দূরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ৭৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন সেতু নির্মাণ করতে যাচ্ছে। অর্থাৎ, দুই সংস্থার সমন্বয়হীনতার মাশুল ৭৩৫ কোটি টাকা।

সেতু নির্মাণকারী সংস্থাগুলো নৌযান চলাচলের কথা বিবেচনা করেনি। এ ছাড়া আগের সরকার বা বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকেও নৌপথ সচল করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পুরো নৌপথের সুবিধা নিতে উচ্চতা কম থাকা সেতু ভেঙে ফেলতে হবে।
কমোডর গোলাম সাদেক, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ।

টঙ্গীতে নতুন দুই সেতু :
টঙ্গীতে তুরাগের ওপর নতুন যে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটি পুরোনো কামারপাড়া সেতুর ঠিক পাশেই। পুরোনো কামারপাড়া সেতুর উচ্চতা ‘স্ট্যান্ডার্ড হাই ওয়াটার লেভেল’ থেকে আট ফুট। নতুনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে আগেরটির চেয়ে ৬ দশমিক ৫৬ ফুট উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে। অবশ্য এতে কাজ হবে না। কারণ, ২০১০ সালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি পুরোনো কামারপাড়া সেতুটি বর্তমান উচ্চতার চেয়ে ১৭ ফুট বেশি উচ্চতায় পুনরায় নির্মাণের সুপারিশ করেছিল। যদিও একই বছর পুরোনো সেতুর পাশেই নতুনটির নির্মাণ শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, নতুন সেতু নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ কোটি টাকা।

নতুন সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। গাজীপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ বলেন, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সভায় ঢাকার চারপাশের নৌপথে সেতুর উচ্চতা স্ট্যান্ডার্ড হাই ওয়াটার লেভেল থেকে প্রায় ১৮ ফুট রাখার কথা বলা হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাঁরা কামারপাড়া সেতুর উচ্চতা নির্ধারণ করেছিলেন। তাঁর দাবি, ২০১৮ সালের নভেম্বরে বিআইডব্লিউটিএ নৌপথের শ্রেণি নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে। এতে এই পথে সেতুর উচ্চতা বাড়িয়ে ধরার বিষয়টি আসে।

তবে সওজের এই দাবির সত্যতা মেলেনি। ঢাকার চারপাশের নৌপথের সেতুর উচ্চতা পরিমাপ করতে ২০০৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) মো. আলাউদ্দীনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি ঢাকার চারপাশে নৌপথের ১৫টি সেতুর উচ্চতা স্ট্যান্ডার্ড হাই ওয়াটার লেভেল অনুযায়ী পরিমাপ করেছিল। কমিটি তাদের প্রতিবেদন দেয় ২০১০ সালে। এতে বলা হয়, ১৩টি সেতুর কোনোটিই নৌযান চলাচল করার মতো উচ্চতায় নেই।

বৃত্তাকার নৌপথে ২০০৪, ২০১০, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে চার দফা ওয়াটার বাস ও লঞ্চ নামানো হয়েছিল। তবে সব কটি অল্প দিন পর বন্ধ হয়ে যায়। এখন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আবার বৃত্তাকার নৌপথ চালুর চিন্তা করছে। এ জন্য উচ্চতা কম থাকা ১৬টি সেতু ভেঙে নতুন করে নির্মাণের চিন্তা করা হচ্ছে।
কামারপাড়া সেতু সম্পর্কে কমিটি বলেছিল, সেতুটির সংযোগ সড়কে কিছুটা অসুবিধা থালেও যেকোনো উপায়ে (প্রয়োজনে আবদুল্লাহপুর-ইপিজেড সড়কের সমান্তরাল রাস্তা করে) সেতুটির নির্দিষ্ট উচ্চতায় পুনর্নির্মাণ করতে হবে।

কামারপাড়া সেতু থেকে কয়েক কিলোমিটার পূর্ব দিকে তুরাগ নদের ওপরই রয়েছে দুটি রেলসেতু। স্ট্যান্ডার্ড হাই ওয়াটার লেভেল থেকে এর একটির উচ্চতা ছয় ফুট, অন্যটির চার ফুট ছয় ইঞ্চি। সরেজমিনে ৩ ফেব্রুয়ারি গিয়ে দেখা যায়, সেতু দুটির ঠিক মাঝে নতুন আরেকটি রেলসেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। নদীতে মাটি ভরাট করে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় চা-দোকানি ইকবাল মিয়া বলেন, বর্ষা মৌসুমে পুরোনো রেলসেতুর নিচ দিয়ে অনেক সময় নৌকাও চলতে পারে না।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পুরোনো সেতু থেকে নতুন রেলসেতুর উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে ৬ দশমিক ৫৬ ফুট। এই উচ্চতা অন্তত ১৯ ফুট বাড়িয়ে ধরার সুপারিশ করেছিল সরকারের কমিটি। এই সেতু নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসাইন বলেন, রেলসেতুর উচ্চতা প্রতি ২০০ মিটারে ১ মিটার বাড়ানো যায়। এই সেতুর উচ্চতা বাড়াতে গেলে টঙ্গী স্টেশনের উচ্চতাও বাড়াতে হবে। পুরো রেললাইন ধরেই তখন পরিবর্তন আনতে হবে। তাই স্ট্যান্ডার্ড হাই ওয়াটার লেভেল থেকে সেতুর উচ্চতা ২৫ ফুট বাড়ানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বর্ষায় পানি বাড়লে এই সেতুর নিচ দিয়ে কোনো যান চলাচল করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে সেতুটির দুই পাশে ল্যান্ডিং স্টেশন করা যেতে পারে।

সওজ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, উচ্চতা সমস্যার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত গড়িয়েছিল। সেখানে আলোচনা শেষেই নির্মাণের সিদ্ধান্ত আসে।

বিআইডব্লিউটিএ বলছে, বৃত্তাকার নৌপথ চালু করতে আমিনবাজার বেইলি সেতু, আশুলিয়া সেতু, প্রত্যাশা সেতু, কামারপাড়া সেতু-১, কামারপাড়া সেতু-২, টঙ্গী সড়কসেতু-২, টঙ্গী সড়কসেতু-৩, টঙ্গী রেলসেতু-১, টঙ্গী রেলসেতু-৩, তেরমুখ সেতু, পূর্বাচল সেতু, ইছাপুরা সেতু, চনপাড়া সেতু, কাউন্দিয়া সিন্নিরটেক সেতু, রুস্তমপুর সেতু এবং উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরসংলগ্ন দেওয়ান বেড়িবাঁধ সেতু ভেঙে ফেলতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, এগুলো অপেশাদারি উন্নয়নের নজির। এখন সংস্থাগুলোর মধ্যে যেনতেনভাবে দূরদর্শী চিন্তা ছাড়া প্রকল্প করার চেষ্টা দেখা যায়। এগুলো সমন্বয়ের দায়িত্ব পরিকল্পনা কমিশনের।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া খণ্ডিত ও জট লাগার উন্নয়ন হচ্ছে উল্লেখ করে শামসুল আলম বলেন, এভাবে চলতে থাকবে, কেউ দায় নেবে না, সেটা হতে পারে না। এতে জনগণকে মাশুল দিতে হবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি