1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ

শ্বশুরের মিথ্যা মামলার ফাঁদে জামাই; নেপথ্যে মাদক ও পারিবারিক কলহ

মুন্সী মেহেদী হাসান
  • আপডেট : বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১
  • ৫১৯ বার দেখা হয়েছে
আশুলিয়ার তাজপুর এলাকায় নিজ শ্বশুরকে মাদক সেবনে বাঁধা দেওয়ায় মেয়ের জামাইকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর মোক্তার পালোয়ানের বিরুদ্ধে। এর নেপথ্যে রয়েছে মাদকাসক্তি ও পারিবারিক কলহ।
জানা যায়, ২০সালের ৯ই অক্টোবর রাত ৯টার সময় তাজপুর এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে আহত আফাজ উদ্দিন পালোয়ান(৮০) নিহতের ঘটনায় ছেলে মোক্তার পালোয়ান বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। (আশুলিয়া থানা মামলা নং-৩১ তাং-১২- ১০-২০২০ ইং)। ওই মামলায় মজিবর রহমান পালোয়ান, মহসিন পালোয়ান, রিয়াজ পালোয়ান, ফেরদৌস পালোয়ান, ফিরোজা বেগম ও লতা বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ৫-৭ জনকে আসামী করা হয়। মামলার ৩নং আসামী রিয়াজ পালোয়ান সম্পর্কে মোক্তার পালোয়ানের মেয়ে জামাই এবং অন্যরা চাচাতো ভাই ও ভাইর বউ।
ঘটনার প্রত্যাক্ষদর্শী কহিনুর বেগম জানায়, মোক্তার পালোয়ান ও মহসিন পালোয়ান এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবি। ঘটনার দিন মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের দুজনের মধ্যে কয়েকদফা হাত-হাতি হয়। এক পর্যায়ে তারা দুজন বাড়ির সামনে এসে আবারও মারামারি করতে থাকে এসময় হৈচৈ শুনে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। এসময় ঘটনাস্থলে মহসিন পালোয়ান ও মোক্তার পালোয়ান লাঠি হাতে নিয়ে একে অপরের দিকে ধেয়ে আসে তখন মহসিনের বড় ভাই মজিবর পালোয়ান এসে মারামারি থামানোর চেষ্টা করলে তাকে মোক্তার পালোয়ান লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে মজিবরসহ তার স্ত্রী আহত। এ সময়ে লাঠি নিয়ে ছুঁটে আসে বৃদ্ধ আফাজ পালোয়ান। দুপক্ষের হুড়োহুড়িতে বৃদ্ধ আফাজ পালোয়ান পা পিছলে সঁটকে পড়ে আহত হয়। পরে এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ঘটনার সময় রিয়াজ পালোয়ান মারামারির স্থলে উপস্থিত ছিলো না। শুনতে পেলাম রিয়াজকে এই মামলায় আসামী করা হয়েছে। আমি ঘটনা যা দেখেছি তাই বলেছি, মৃত্যু হলেও মিথ্যা বলবো না।
শাহাদুল মন্ডল নামে এক প্রতিবেশী সিএনজি চালক জানায়, মারামারি শেষে আহত মজিবর পালোয়ানের স্ত্রী আমাকে ঘটনাস্থলে আসতে বলে এবং রিয়াজকে আসার জন্য ফোন করতে বলে। আমি এসে রিয়াজ পালোয়ানকে মুঠোফোনে ঘটনাস্থলে আসতে বললে রিয়াজ এসে আহত মজিবর পালোয়ানকে চিকিৎসার জন্য সিএনজি যোগে হাসপাতালে পাঠায়। এরপরে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে তার দাদা শ্বশুর আফাজকে চিকিৎসার জন্য সাভারের একটি হাসপাতালে পাঠায়। রিয়াজ ঘটনার সময়ে রিয়াজ ছিলো না। এবিষয়ে আমি থানায় স্বাক্ষীও দিয়েছি।
রিয়াজের স্ত্রী সুমি বেগম জানায়, নিহত আফাজ পালোয়ান সম্পর্কে আমার দাদা এবং মামলার বাদী মোক্তার পালোয়ান আমার বাবা আর রিয়াজ পালোয়ান আমার স্বামী। আমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় আমাদের সাথে সম্পর্ক একটু খারাপ চলছিলো। আমার সৎ মা সবসময় অধিকার থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করতো। দাদা নিহতের ঘটনায় সৎ মায়ের প্ররোচণায় আমার স্বামীকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমার সৎ মা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে আমার বাবাকে ভূল বুঝিয়ে আমার স্বামীকে মামলায় জড়িয়েছে। ওই সৎ মায়ের যোগসাজশে একটি মহল আমার স্বামীকে মামলায় জড়িয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। ওইদিন মারামারির সময় রিয়াজ দূরে ছিলো। খবর পেয়ে ছুঁটে এসে আহত দাদাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেন অথচ তাকেই আসামী বানানো হয়েছে।
রিয়াজ পালোয়ান জানায়, মারামারি শেষ হওয়ার পরে সিএনজি চালক শাহাদুলের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুঁটে যাই। এসময় আহত মজিবর মামাকে সিএনজি যোগে তাকে এবং আমার দাদা শ্বশুরকে হাসপাতালে পাঠাই। পরে সেখান থেকে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে মোহাম্মদপুরের বিতর্কিত নূরজাহান অর্থপেডিকে ভর্তি করে আমার শ্বশুর। সেখানে ৪দিন চিকিৎসাধীন থেকে দাদা শ্বশুরের মৃত্যু হয়। আমার মনে হয় তাকে যদি একটি ভালো হাসপালে ভর্তি করা হতো তাহলে তার মৃত্যু হতো না । কারণ ওই হাসপাতালটিতে বিভিন্ন অনিয়ম ও ওয়ার্ড বয়কে দিয়ে রোগীদের অপারেশন পরিচালনার অভিযোগে গত ২৮/১০/২০২০ ইং তারিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও র‌্যাব-২ এর সহযোগীতায় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পলাশ কুমার বসুর নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। সেই সাথে হাসপাতালটির পরিচালক বাবুল হোসেনকে ১বছর কারদন্ড এবং ওয়ার্ড বয়কে ২বছর কারাদন্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমান আদালত।
স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, মোক্তার পালোয়ান এলাকার চিহ্নিত মাদক সেবী। মাদক সেবনের অর্থ যোগান দিতে সে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী, জাল দলিল বানিয়ে জমি দখলের চেষ্টা, বিভিন্ন মামলায় টাকার বিনিময়ে মিথ্যা স্বাক্ষী দেওয়া, নিরীহ লোকজনকে মিথ্যা মামলা ফাসিয়ে অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগও রয়েছে। ২০২০সালে তাকে কয়েকবার রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসার কিছুদিন পরে আবারও সে মাদকাসক্তিতে জাড়িয়ে পড়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয়রা জানায়, মোক্তার ও মহসিন পালোয়ান দুজনেই মাদক সেবী। তাদের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হাতাহাতি লেগে থাকতো। আবার একসাথে মাদক সেবন করতো। ঘটনার দুইদিন আগে তাদের মধ্যে মাদক ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ বাঁধে। গত ০৯/১০/২০ইং তারিখ রাত ৯টার সময় তাদের মধ্যে মারামারি হয়। এই মারামারি ঠেকাতে গিয়ে পড়ে আহত হয় বৃদ্ধ আফাজ উদ্দিন। তখন তার কোন রক্তক্ষরণ হচ্ছিলোনা বা কাটা ছেড়া জখমও ছিলো না। আমাদের সন্দেহ হয়  মোহাম্মদপুরের নুরজাহান অর্থোপেডিক্স হাসপাতালে ভূল চিকিৎসার কারনে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। কারন আমরা শুনেছি ঐ হাসপাতালে নাকি ওয়ার্ড বয় দিয়ে অপারেশন করানো হতো।বিভিন্ন অনিয়ম আর  ভূল চিকিৎসার কারনে ২৮/১০/২০২০ ইং তারিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও র‌্যাব-২ এর সহযোগীতায় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পলাশ কুমার বসুর নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। আসলে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারনে এরকম মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বাদী মোক্তার পালোয়ান এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবি এবং মাদক কারবারি সেই সাথে মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত ।
এবিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, মামলা করেছি, এখন আদালত বুঝবে বলে ফোন কেটে দেন। সাক্ষাৎ করার জন্য   একাধিকবার  চেষ্টা করা হলেও মোক্তার পালোয়ানের সাথে সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি