1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন

সাদুল্লাপুরে রিকশাচালককে বেঁধে টানা ১২ ঘণ্টা নির্যাতন, ‘৯৯৯’ এ ফোনে রক্ষা

রানা রহমান
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০২১
  • ২০২ বার দেখা হয়েছে

ঘরে আটকে রেখে দুই পা বেঁধে টানা ১২ ঘণ্টা নির্যাতনের পর জিম্মিদশা থেকে রক্ষা পেলেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ছকু মিয়া নামে সেই রিকশাভ্যান চালক।

রবিবার সন্ধ্যায় জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ -এ ফোন পেয়ে পুলিশ ছকু মিয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়।

শনিবার রাতে এই নির্যাতনের ঘটনায় রিকশাভ্যান চালক ছকুর মিয়ার এক হাত, পা ও দাঁত ভেঙে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের পূর্ব দামোদরপুর (পাতারীবাড়ি) গ্রামের দাদন ব্যবসায়ী ছয় ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

নির্যাতনের শিকার ছকু মিয়া একই গ্রামের মৃত ওসমান গণির ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, পূর্ব দামোদরপুর গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের ছয় ছেলে আলমগীর, আংগুর, রনজু, মনজু, সনজু ও মন্টু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় দাদন (সুদ) ব্যবসা চালিয়ে আসছে। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই হয়েছেন নি:স্ব। এই সুদের টাকায় তারা অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়ে এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে আসছেন। এছাড়া তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসিও।

জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যার দিকে সুদ ব্যবসায়ী মন্টু মিয়ার অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে মণিশা আকতার (১৪) প্রতিবেশি ছকু মিয়ার ছেলে গামেন্টকর্মী মোজাম্মেল হকের (১৫) হাত ধরে পালিয়ে যায়। এরপর রাত ৭টার দিকে মন্টুসহ তার পাঁচ ভাই আলমগীর আংগুর, রনজু, মনজু ও সনজু দলবেধে ছকু মিয়ার বাড়িতে যায়। পরে ছয় ভাই মিলে ছকুর দুই পা বেঁধে রাতভর লাঠি ও টচ লাইট দিয়ে এলোপাথাড়ি মারপিট করতে থাকে। এতে তার এক হাত ও এক পা ভেঙে যায়। এছাড়া পুরো শরীরে চিহ্ন পড়েছে ক্ষতের। ভেঙে গেছে একটি দাঁতও।

এদিকে, সকাল থেকে ছকু মিয়ার বাড়িতে চুলা পর্যন্ত জ্বলতে দেয়নি তারা। এমনকি তাকে নিজ বাড়িতে জিম্মি করে রাখা হয়। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও জিম্মি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে ছয় ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

এদিকে, রবিবার বিকেল পাঁচটার দিকে স্থানীয় এক সংবাদকর্মী এই অমানবিক ঘটনাটি জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এ ফোন করে জানায়। পরে সন্ধ্যার দিকে সাদুল্লাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছকুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করায়।

অপরদিকে, এ অমানবিক ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করায় অনলাইন নিউজপোর্টাল নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম এর গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি পিয়ারুল ইসলামের উপর রবিবার দুপুরে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে দাদন ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন ও তার ভাই রনজু মিয়া। পরে একটি চা দোকানে উপস্থিত লোকজনের তোপের মুখে তারা চলে যেতে বাধ্য হয়।

এরপর তারা চলে গেলে মোবাইল ফোনে প্রতিবেদক পিয়ারুল ইসলাম হুমায়ূণকে হত্যার হুমকি দেয় মন্টু মিয়া।

এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার ছকু মিয়া বলেন, ‘মারছে; সারা রাত। সকাল ৭টা পর্যন্ত ডাংগাছে (মারছে)। বড় দেওয়ানিকো (কাসেম-ভাই) দুই তিনটে ডাং মারছে। কালকে রাত মনে কর যে, ৭টা খাকি শুরু। সারা রাত আর সকাল ৭টা পর্যন্ত মারছে।’

‘হাত-পাও এই রকম করি বাঁনদিছে। দুই পাও একঠাই করি বাঁনদিছে। পাতেলখোলা করি সোতেয়া মারছে। পায়ের তালায় ডাংগাছে। গদ্দনা-ঘাড়ে ডাংগাছে; পানজারায় মারছে। লাইট দিয়ে মারছে। দাঁত ভাঙচে; বিদেশি লাইট দিয়ে নখটেতে বাড়ি মারছে। পাও মচকে দিছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চোরের মতন করি পাও বাঁনদিয়ে ডাংগাছে। কেউ আগেই নাই।’

ছকু মিয়ার পরিবারের অভিযোগ, রাতভর নির্যাতনে ছকু মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পানি পর্যন্ত খেতে দেয়া হয়নি। না চিকিৎসা; না ওষধ। বর্তমানে শরীরের শত ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ছকু মিয়া।

এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘৯৯৯’-এ ফোন পেয়ে ছকু মিয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।’

সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নবীনেওয়াজ বলেন, ‘নির্যাতিত রিকশাভ্যান চালক ছকু মিয়াকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি