1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
কাতার-বাংলাদেশ ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই ২৩ নাবিকসহ আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে ভিড়ল এমভি আবদুল্লাহ তাপপ্রবাহে বিচারকাজ অনলাইনে করতে প্রধান বিচারপতিকে বারের চিঠি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন বুধবার, সই হচ্ছে ছয় চুক্তি-সমঝোতা প্রবাসীদের তিন ব্যাংকের একটিতে তারল্যসংকটে, আরেকটি চেয়ারম্যানই সর্বেসর্বা ,অন্যটি এমডি–শূন্য দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি মার্কিন ডলার দুবাই পৌঁছেছে এমভি আবদুল্লাহ

স্পিরিট আর রঙের তৈরি দামি ব্র্যান্ডের ‘বিদেশি মদ’

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ৬৯২ বার দেখা হয়েছে

ঢাকা: পুরান ঢাকার মিটফোর্ড থেকে আনা স্পিরিটের সঙ্গে মেশানো হয় পানি, রং আর কিছু কেমিক্যাল। আর এতে মুহূর্তেই তৈরি হয়ে যাচ্ছে বিদেশি মদ। এরপর বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ডের বোতলে করে গ্রাহকপর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে এ ভেজাল মদ।
একবোতল এ ভেজাল মদ তৈরি করতে খরচ মাত্র ৩০ থেকে ৫০ টাকা। অথচ গ্রাহক পর্যায়ে এর দাম ছয় থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্তমান বাজারে চাহিদার তুলনায় বিদেশি মদের যোগান কমে যাওয়ার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এভাবেই ভেজাল মদের রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে মদপানে বেশ কয়েকজন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ধারাবাহিক এসব ঘটনার জেরে ধরেই তদন্তে নামে পুলিশ। একটি ঘটনার সূত্র ধরে রাজধানীর ভাটারা থানাধীন খিলবাড়িরটেক এলাকায় ভেজাল মদ তৈরির ওই কারখানার সন্ধান পায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে ডিবির গুলশান বিভাগের পরিচালতি এক বিশেষ অভিযানে ওই কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ ভেজাল মদ ও মদ তৈরির বিপুল সরঞ্জামসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- মনতোষ চন্দ্র অধিকারী ওরফে আকাশ (৩৫), রেদুয়ান উল্লাহ (৩৫), সাগর বেপারী (২৭), নাসির আহমেদ ওরফে রুহুল (৪৮), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) ও সৈয়দ আল আমিন (৩০)।
ডিবি পুলিশ জানায়, গত কয়েকদিনে মদপান করে অসুস্থ হয়ে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকায় তিনজন ও মোহাম্মদপুর এলাকায় দুইজনের মৃত্যু হয়। তদন্তে দেখা যায়, নিহত ব্যক্তিরা যে মদ পান করেছিলেন, সেসব ওই কারখানাতেই তৈরি হয়েছিল।
খিলবাড়িরটেক এলাকার একটি বাসার দোতলায় ভেজাল মদের এ কারখানায় সহজেই তৈরি হচ্ছিলো বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ডের ভেজাল মদ। এ ভেজাল মদ তৈরির মূল উপকরণ স্পিরিট, যা আনা হতো পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকা থেকে। পরিমাণ মতো স্পিরিটের সঙ্গে পানি, রং, চিনির সিরা আর কিছু কেমিক্যাল মিশিয়ে নিমিশেই প্রস্তুত করা হতো এ মদ।
এদিকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও হকারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হতো বিভিন্ন বিদেশি মদের বোতল। রাশিয়ান, স্কটিশ, সুইডিশসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের বোতলে ভেজাল মদ পুরে ছিপির উপরে মোমবাতি দিয়ে প্লাস্টিকের লেবেল লাগিয়ে দেওয়া হতো। স্বাভাবিকভাবে যা দেখে বুঝার উপায় নেই মদটি নকল কি না।
গ্রেফতারদের বরাত দিয়ে ডিবি পুলিশ জানায়, এক গ্যালন স্পিরিট দিয়ে ৫০ থেকে ৫৫ বোতল মদ তৈরি করা হতো। যে কোনো দামি ব্র্যান্ড বলে বাজারজাত করা প্রতিবোতল এ মদ তৈরিতে খরচ হতো মাত্র ৩০ থেকে ৫০ টাকা। কারখানা থেকে চক্রটির নিয়োজিত ডিলারের কাছে বিক্রি হতো ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকায় আর ভোক্তাপর্যায়ে প্রতিবোতল এ মদ বিক্রি হতো ছয় থেকে সাত হাজার টাকায়।
গ্রেফতার জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি চাঁদপুরে। এক সময় তিনি ভাঙারি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। প্লাস্টিক ও কাঁচের বোতল সংগ্রহ করে মিডফোর্ডে বিক্রি করতেন। পড়ালেখা না জানা এ জাহাঙ্গীরই বনে যান মদ কারখানার প্রধান ক্যামিস্ট। যিনি গত প্রায় তিন মাস ধরে কারখানাটিতে ভেজাল মদ তৈরি করছিলেন। বিনিময়ে প্রতিদিন তিনি ৫০০ টাকা পেতেন।
এ চক্রটির মূলহোতা ও ভেজাল মদ তৈরির কারখানার মালিক নাসির আহমেদ ওরফে রুহুল। তিনি একসময় বিভিন্ন বারে বারটেন্ডার হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধভাবে মদ বিক্রি করে আসছিলেন। আগে একটি মদের বোতল থেকে দুই থেকে তিনটি বোতল তৈরি করে বিক্রি করতেন। বর্তমানে বাজারে মদের সংকট তৈরি হওয়ায় নিজেই গড়ে তুলেছেন মদ তৈরার কারখানা।
গত কয়েকদিন মদপান করার পর অসুস্থ হয়ে ভাটারা থানা এলাকায় তিনজন, ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় একজন ও মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় দুইজনসহ মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবি গুলশান বিভাগ।
তদন্তে ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় মদ সেবনে মৃত্যুর ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুইজন ব্যক্তি মোটরসাইকেলযোগে এসে এক বোতল মদ ভিকটিমকে দিয়ে চলে যায়। যা সেবন করে পরবর্তিতে ভিকটিমের মৃত্যু হয়। একপর্যায়ে ওই দুই ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় ডিবি পুলিশ। গত ২৮ জানুয়ারি রেদুয়ান ও মনতোষ মোটরসাইকেল যোগে গত ২৮ জানুয়ারি এক বোতল মদ দিয়ে গিয়েছিল ওই ব্যক্তিকে।
তাদের গতিবিধি অনুসরণ করে সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে নয়টায় তেজগাঁওয়ের ইয়ানতুন চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে মনতোষ, রেদুয়ান ও সাগরকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভাটারা থানার খিলবাড়িরটেক এলাকার ভেজাল মদ তৈরির ওই কারখানায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে কারখানার মালিক নাসির, ম্যানেজার আল আমিন ও জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ চক্রের মূলহোতা নাসির দীর্ঘদিন ধরেই চড়ামূল্যে বিদেশি মদের নামে ক্রেতাদের হাতে বিষ তুলে দিচ্ছেন। একজন ভাঙারি ব্যবসায়ীর হাতে প্রস্তুতকৃত এ ভেজাল মদ খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতার মাধ্যমে সেবনকারী পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি দেখতেন ম্যানেজার আল আমিন।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ভেজাল মদের এ কারখানাটি থেকে গত এক সপ্তাহে ২৩১ বোতল মদ বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষাক্ত মদ যারা পান করবে তাদের অঙ্গহানী ঘটনার আশঙ্কা থাকে, কয়েকজন মারাও গেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি