1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১০:৪৪ অপরাহ্ন

ভারতের লুকোচুরি ভোগাবে সারা বিশ্বকে

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ৮ মে, ২০২১
  • ৩০৩ বার দেখা হয়েছে

ভারতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া নিয়ে বছর কয়েক আগে আমি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কাজ করছিলাম। ওই সময় নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এলেন। ওডিশার ক্ষুদ্র জাতিসত্তা–অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে নয়াদিল্লিতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়—আমি ঘুরে বেড়িয়েছি বিস্তীর্ণ এলাকা। আর সে সময় আমার সহকর্মী ও আমি দেখেছি, ম্যালেরিয়ার মৃত্যুর কিছু ঘটনা স্থানীয় স্বাস্থ্য অফিসের খাতায় হাতে লেখা থাকত। কিন্তু এগুলো কখনোই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিবেদনে উঠত না। ম্যালেরিয়ার মৃত্যুর অনেক ঘটনা একেবারে জাদুবলে ‘হার্ট অ্যাটাক’ বা ‘জ্বরের’ কারণে মৃত্যু হয়ে যেত। আর সরকারি প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবতার ছিল দুস্তর ব্যবধান। উদাহরণ দিই। ভারত সরকার সে বছর ম্যালেরিয়ায় ৫৬১ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল, ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

আজ সেই ভারতজুড়ে করোনার তাণ্ডব চলছে। ভারতের দিশেহারা মানুষ অক্সিজেনের সিলিন্ডার বা হাসপাতালে শয্যা চেয়ে টুইটারে আহাজারি করেছে। করোনাসংক্রান্ত তথ্য চাপা দেওয়ার সরকারি তৎপরতা এ সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। রোগে ভুগে মৃত্যুর ঘটনা লুকোনো বা গণনা না করার ইতিহাস ভারতে পুরোনো। সাম্প্রতিক সময়ে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গণমাধ্যমকে বাধা দেওয়ার প্রবণতা। আর এই দুয়ে মিলে মোদি প্রশাসন করোনার প্রকৃত চিত্রসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া একেবারে অসম্ভব করে তুলেছে। তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধকতা ভারতের কোটি মানুষকে বিপর্যস্ত করবে। কিন্তু এর চেয়েও বড় কথা, এর ফলে কোভিড-১৯–এর চিকিৎসা কিংবা করোনার নতুন ধরন রুখতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ভারত এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মহামারি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতে সরকারিভাবে কোভিডে যে ২ লাখ ২২ হাজার মানুষের মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে, তা আসলে সংখ্যার ভগ্নাংশমাত্র। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন মনে করে, ভারত শুধু এসব ঘটনার ৩ থেকে ৪ শতাংশ তুলে ধরতে পারছে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, মুম্বাইয়ের মতো শহরে সরকার যে সংখ্যা বলছে, এর চেয়ে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। কোভিডে মৃত্যু নিয়ে ভারতে সরকারি তথ্যের এই বিভ্রান্তির নানা কারণ রয়েছে। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার কারণে সরকারি হাসপাতালের বাইরে অসংখ্য বেসরকারি ক্লিনিক বা বাসাবাড়িতে যে মৃত্যু ঘটছে, তার হিসাব থাকছে না। আরেকটি কারণ হচ্ছে বিশ্বের এই বৃহৎ অর্থনীতির দেশ স্বাস্থ্য খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশেরও কম ব্যয় করে।

করোনা সামলাতে ব্যবস্থাগত ত্রুটি সামগ্রিক ব্যর্থতা একটি দিক। অন্য বিষয়টি হলো ক্ষমতাসীন দলের উন্নাসিকতা। করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকেই সরকার একে সামলাতে নিজেদের সাফল্য নিয়ে উচ্চকণ্ঠ ছিল। উত্তর প্রদেশসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গার যখন লাখো চিতা জ্বলছে, তখন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার দাবি করেছেন, পরিস্থিতি একেবারে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে। লকডাউন দেওয়ার প্রয়োজন থাকলেও বারবার তাঁরা তা দিতে রাজি হননি।

এই উপেক্ষার বাগাড়ম্বর সর্বত্রই দেখা গেছে ভারতে। তা সে যক্ষ্মা হোক বা ম্যালেরিয়া। বারবার সরকারি স্তরে এসব কথা বলা হয়েছে যে বহির্বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এসব নিয়ে বাড়িয়ে বলা হয়। মুখ রক্ষা কিংবা জীবন রক্ষা—মোদি সরকারের কাছে এই দুই পথ খোলা ছিল। তারা গণহারে মৃত্যুকেই বেছে নিয়েছে।

ভারতের অনেক সাংবাদিক আমাকে বলেছেন, কোভিড-১৯–সংক্রান্ত খবর পরিবেশন করার ক্ষেত্রে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। তাঁরা একধরনের স্ব–আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন। এমনকি তাঁরা যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব নিয়ে কোনো মন্তব্য করেন, সেখানেও বাধা আসে। গত সপ্তাহে টুইটার ও ফেসবুকে কোভিড-১৯ নিয়ে সরকারবিরোধী কোনো কোনো মন্তব্য মুছে দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হয়। আর এভাবে ভারত সাংবাদিকদের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে ভয়ানক এক স্থান হয়ে উঠছে। কোভিড-১৯–সংক্রান্ত সংবাদ কভার করতে গিয়ে ভারতে এ পর্যন্ত ১৬৫ জন সাংবাদিক মারা গেছেন।

ভারতের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই ভয়াবহ প্রতিফল শুধু ভারতকে নয়, সারা বিশ্বকে ভোগ করতে হবে। এমনকি এখন যারা কোভিড-১৯ রুখতে সাফল্য পেয়ে একটু স্বস্তিতে আছে, তারাও। ভারত সারা বিশ্বের মধ্যে পোলিও নির্মূল করা সর্বশেষ দেশ। এটি বিশ্বের ১৫ দেশের মধ্যে একটি, যেখানে এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কুষ্ঠ রোগী আছে। ভারত তৃতীয় সর্বোচ্চ এইডস রোগীর দেশ। স্বাস্থ্যগত এসব সমস্যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণ, বাণিজ্য ও অর্থনীতির সূচকের ক্ষেত্রে শুধু ভারতের জন্য নয়, সারা বিশ্বকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র হিসেবে তুলে ধরতে ভারত সব সময় উচ্চকিত। এ নৈতিক কর্তৃত্বকে বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারত অনেক সময় ব্যবহার করে। কিন্তু কোভিড-১৯ নিয়ে বাকি বিশ্বকে অন্ধকারে রাখার যে তৎপরতা ভারত চালাচ্ছে, তাতে তাদের সেই অবস্থান ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। স্বচ্ছতাকে ছাপিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার এই অব্যাহত প্রচেষ্টা কোভিড-১৯ রুখতে লড়াই করা ভারতের কোটি কোটি পরিবারকে শুধু ভোগাবে না; এতে ভুগবে সারা বিশ্ব।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি