1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন

কালাম যুবদল নেতা এমপি হাজারীর হাত ধরে আওয়ামীলীগের কাউন্সিলর অতপর খুনী

ফেনী প্রতিনিধি :
  • আপডেট : রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০২১
  • ৬২৪ বার দেখা হয়েছে

গরু লুট করতে না পেরে ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আলোচনায় আসা ফেনী পৌরসভার কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম সাড়ে তিন বছরে আগেও ছিলেন যুবদলের কর্মী। ছাত্রলীগ নেতা রতন হত্যা মামলারও আসামি ছিলেন। বিএনপি নেতা ভিপি জয়নালের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন কালাম। যুবলীগে যোগ দিয়েই এক বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা বনে যান। আবুল কালামের রাতারাতি এই উত্থানের পেছনে রয়েছেন ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। তাঁর হাত ধরেই কালাম আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলরও বানানো হয়েছে। অবশ্য ওই ওয়ার্ডের তিনি বাসিন্দাই নন। সেই ওয়ার্ডে তাঁকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও করা হয়েছে।

ফেনীর গার্লস ক্যাডেট কলেজ রোডের সাহেব বাড়ি এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে গরু লুটে বাধা দেওয়ায় মো. শাহজালাল (৩৫) নামের এক গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম ও তাঁর তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। হত্যার ঘটনার পর কালাম পালিয়ে যান। তাঁর দুই সহযোগী নাইম হাসান ও মো. সাগরকে এই ঘটনায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে নাইম গতকাল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, কাউন্সিলর কালাম নিজেই গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করেন। তারপর তিনজনে (গ্রেপ্তার দুজনসহ) মিলে লাশটি পুকুরে ফেলে দেন।

ফেনী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, পৌর কাউন্সিলর কালামকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
আবুল কালাম ৬ নম্বর সুলতানপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হলেও তিনি ৫ নম্বর বিরিঞ্চি ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা। সুলতানপুরে তাঁর কোনো বাড়ি, জমি, কোনো ধরনের স্থাপনা বা ব্যবসা নেই। তারপরও কায়দা করে ওই ওয়ার্ডের ভোটার হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পৌরসভার কাউন্সিলর হন। তাঁকে ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও বানানো হয়।

ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনুল কবিরের দাবি, দলের প্রয়োজনেই কালামকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। দলের স্বার্থেই ওই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গরু ব্যবসায়ী খুনের ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয় অপরাধ। গতকাল পৌর আওয়ামী লীগ জরুরি সভা করে কালামকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে।

২০১৮ সালের আগে আবুল কালাম ফেনী যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফেনী-২ আসনের বিএনপির সাবেক সাংসদ জয়নাল আবদীন (ভিপি জয়নাল)। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জানান, যুবলীগে যোগ দেওয়ার পর কালামের এত দ্রুত উত্থানের পেছনে রয়েছে সাংসদ নিজাম হাজারীর ‘সুনজর’। এ প্রসঙ্গে নিজাম হাজারী বলেন, দলে অনেকেই যোগ দিয়েছেন। কালাম তাঁর যোগ্যতার ভিত্তিতে পদ পেয়েছেন। এখন তিনি পদের মর্যাদা রাখতে পারেননি। তাঁর অপকর্মের দায় দল নেবে না।খুন হওয়া গরু ব্যবসায়ী শাহজালালের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে। তিনি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। মাত্র চার মাস আগে বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রী এখন অন্তঃসত্ত্বা।

শাহজালালের চাচাতো ভাই আল আমিন বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা শাহজালালের পরিবার। তাঁর স্ত্রী রূপা আকতার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি বারবার বলছেন, তাঁদের অনাগত সন্তান কাকে বাবা ডাকবে। নিজের ও সন্তানের কী হবে। নিহত শাহজালালের লাশ ফেনী হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে কিশোরগঞ্জে গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। ফেনীতে বিক্রির জন্য আনা তাঁর গরুবাহী ট্রাকটিও বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
গ্রেপ্তার দুই আসামির মধ্যে নাইম হাসান গতকাল ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। নাইম ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র। তিনি কাউন্সিলর কালামের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

স্বীকারোক্তিতে নাইম বলেন, কোরবানি উপলক্ষে বিক্রি করার জন্য শাহজালালের আনা গরু লুট করতে যান তাঁরা। শাহজালাল বাধা দিলে তাঁকে কালাম গুলি করেন। পরে লাশটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তার আরেক আসামি সাগরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে একই আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ফেনী সদর মডেল থানার ওসি  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কালাম ফেনী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ওরফে রতন হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর সুলতানপুর এলাকায় যুবদলের মধ্যে সংঘর্ষে রতন নিহত হন। ওই ঘটনায় করা মামলাটি পরবর্তী সময়ে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে আবুল কালামের নাম রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল  বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু লোক বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে ঢুকে পড়েছে, এটা ঠিক হয়নি। এদের সম্পর্কে ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকতে হবে। রতনকে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল, সেই এলাকায়ই বৃহস্পতিবার রাতে গুলি করে হত্যা করা হয় গরু ব্যবসায়ী শাহজালালকে।
রতন হত্যার ঘটনা ফেনীতে তখন বহুল আলোচিত ছিল। রতনের বড় ভাই আলমগীর হোসেন হাজারীও (তোতা) ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। আলমগীর হোসেন হাজারী বলেন, ‘রতন হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে, আবার নেতা হয়েছে। এখন চাঁদাবাজি করছে, মানুষ খুন করছে। এটা খুবই দুঃখজনক।’

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি