ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই একটি গোষ্ঠী ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে তৎপর হয়ে ওঠে। এসব গোষ্ঠী ধর্মের কল্যাণের চেয়ে নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে কাজ করে। এদের বিষয়ে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালিত ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতামূলক আন্তঃধর্মীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ধর্মের নাম ব্যবহার করে যারা ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কোনো কাজ করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিগত ১২ বছরে সব ধর্মের মানুষের কল্যাণ এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অনুদান প্রদান করেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। শত শত মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জা মেরামত, উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছে। ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে আগামী দিনের সুনাগরিক তৈরি করতে মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডা ভিত্তিক প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উপাসনালয় ভিত্তিক এসব শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশে এরই মধ্যে লাখ লাখ শিশু শিক্ষা গ্রহণ করেছে।
ফরিদুল হক খান আরও বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। জাতির পিতা বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা তথা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের মূলনীতি সন্নিবেশিত করে গেছেন।
কেউ যেন দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ বিনষ্ট করতে না পারে এবং দেশের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিশেষ করে মসজিদের খতিব ও ইমামগণ জুমার বয়ানে নিয়মিতভাবে এসব বিষয় তুলে ধরতে পারেন।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমের সভাপতিত্বে সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আবদুল জব্বার, ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল শাহীন, পুলিশ সুপার এম শাকিলুজ্জামান শাকিল, রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক বিশ্বাস, রাজবাড়ী পৌরসভার চেয়ারম্যান আলমগীর শেখ তিতু, বিশিষ্ট ইসলামি আলোচক ড. আব্দুল মোমেন সিরাজী।
সংলাপে অংশগ্রহণ করে আরও বক্তব্য রাখেন ভান্ডারীয়া দরবার শরীফ রাজবাড়ীর পীর আবুল ইরশাদ মো. সিরাজুম মুনীর, পাংশা সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আওয়াবুল্লাহ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি শ্রী প্রদীপ্ত কুমার চক্রবর্তী, রাজবাড়ী-ফরিদপুর জেলা ব্যাপ্টিস্ট চার্চের যাজক ও সভাপতি জেমস হালদার, রাজবাড়ী জেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা ইলিয়াছ মোল্লাহ, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট গণেশ নারায়ণ চক্রবর্তী, রাজবাড়ী ব্রাহ্মণ সংসদের সভাপতি অলক চক্রবর্তী প্রমুখ।
এ সময় রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, নির্বাহী অফিসার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, সংস্কৃতি কর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করে রাজবাড়ী জেলাসহ সারা দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধি ও সুসংহত করতে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন।