দীর্ঘ ৪০২ দিন পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। বল হাতে দলকে এনে দিলেন প্রথম ব্রেক থ্রুও। কিন্তু জয় নিয়ে হাসিমুখে মাঠ ছাড়া হলো না তার। ব্যাটারদের ভয়াবহ ব্যর্থতায় মাত্র ১০০ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল মিনিস্টার ঢাকা।
যা খুব সহজেই টপকে গেছে সিলেট সানরাইজার্স। উইকেটরক্ষক ব্যাটার এনামুল হক বিজয়ের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ১৮ বল হাতে রেখে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে আসরের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে সিলেট। অন্যদিকে চতুর্থ ম্যাচে ঢাকার এটি তৃতীয় পরাজয়।
ঢাকার দেওয়া ১০১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রথম উইকেট হারায় সিলেট। মাশরাফির ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে রুবেল হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ২১ বলে ১৬ রান করা ক্যারিবীয় ওপেনার লেন্ডল সিমন্স।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে মোহাম্মদ মিঠুন ও এনামুল বিজয় যোগ করেন ৩৮ রান। ইনিংসের ১১তম ওভারে হাসান মুরাদের বলে আউট হওয়ার আগে ১৫ বলে ১৭ রান করেন মিঠুন। কলিন ইনগ্রামকে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলের জয় নিশ্চিত করেন এনামুল বিজয়।
তবে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি বিজয়। ইনিংসের ১৭তম ওভারে নিজের স্পেল শেষ করতে এসেছিলেন মাশরাফি। সেই ওভারের তৃতীয় বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৪৫ বলে ৪৫ রান করা বিজয়। সেই ওভারের শেষ বলেই ম্যাচ জিতে যায় সিলেট।
প্রায় ১৩ মাসের বেশি সময় পর ফেরা মাশরাফি পুরো ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ২১ রান খরচায় নিয়েছেন ২ উইকেট। কিন্তু বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়তে পারেননি তিনি।
এর আগে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ঢাকাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল সিলেট। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় ঢাকা। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই সাজঘরে ফিরে যান মোহাম্মদ শেহজাদ (৫), তামিম ইকবাল (৩) ও জহুরুল ইসলাম (৪)।
প্রথম ছয় ওভার থেকে ঢাকা করতে পারে মাত্র ২২ রান, ৩ উইকেটের বিনিময়ে। সিলেট তাসকিন আহমেদকে দিয়ে বোলিং শুরু করালেও এরপর টানা ৮ ওভার করে যান দুই অফস্পিনার সোহাগ গাজী ও অধিনায়ক মোসাদ্দেক সৈকত।
এ দুজনের সামনে রীতিমতো হাঁসফাঁশ করছিলেন তামিম, জহুরুল, নাইম শেখরা। তিন নম্বরে নাইম যেন পুরোপুরি টেস্ট মেজাজে খেলতে থাকেন। মোসাদ্দেক-গাজীর করা টানা ৮ ওভার শেষে নাইমের নামের পাশে ছিল ২০ বলে মাত্র ৬ রান।
তবে অন্যপ্রান্তে রানের চাকা সচল রাখার প্রাণপন চেষ্টা করছিলেন ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার কল্যাণেই মূলত ইনিংসের ১১তম ওভারে দলীয় পঞ্চাশ পূরণ হয় ঢাকার। এরপর ১৩তম ওভারে ঘটে আম্পায়ারের ভুলের জোড়া ঘটনা।
নাজমুল অপুর করা সেই ওভারের প্রথম বলে নাইম শেখকে লেগ বিফোর আউট দেন আম্পায়ার শরফৌদ্দৌল্লাহ ইবনে সৈকত। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল নাইমের প্যাডেই লাগেনি, আঘাত করেছিল গ্লাভসে। কিন্তু আম্পায়ার আউট দেওয়ায় সমাপ্তি ঘটে নাইমের ৩০ বলে ১৫ রানের ইনিংসের।
একই ওভারের চতুর্থ বলে আন্দ্রে রাসেলের বিপক্ষে জোরালো আবেদন করেন নাজমুল অপু। আবারও আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার সৈকত। এবার রিপ্লেতে দেখা যায় বলটি রাসেলের প্যাডে আঘাত হানার আগে লেগেছিল ব্যাটে। কিন্তু রিভিউ সিস্টেম না থাকায় ০ রানেই ফিরতে হয় রাসেলকে।
নিজের পরের ওভারে ঢাকার অধিনায়ককেও ফিরিয়ে দেন অপু। প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে দাঁড়ানো তাসকিনের হাতে ধরা পড়েন ২৬ বলে ৩৩ রান করা মাহমুদউল্লাহ। এরপর আর মূলত কিছুই বাকি ছিল না ঢাকার ব্যাটিংয়ের।
তবু শুভাগত হোমের দুই চার ও এক ছয়ের মারে ১৬ বলে ২১ এবং রুবেল হোসেনের এক চার ও এক ছয়ের মারে ৬ বলে ১২ রানের সুবাদে দলীয় ১০০ পূরণ হয় ঢাকার। শুভাগতকে ফিরিয়ে নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার তুলে নেন নাজমুল অপু। এছাড়া তাসকিন ৩ ও গাজীর শিকার ২ উইকেট।