আবু তাহের বাপ্পা : নওগা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ববি ছোটবেলা থেকেই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই সময় থেকেই তিনি নিজের মতো করে কাজ শুরু করেন। টিউশনি করেছেন স্কুল জীবনে, কখনো হাতের সেলাইয়ের কাজও করেছেন। কাজকে কখনো ছোট করে না দেখার কারণেই ববি আজ নারী উদ্যোক্তার মডেল হয়ে উঠেছেন।
ববি তার ব্যবসায়িক জীবনের শুরুতেই গড়ে তুলেছেন টেইলারিং শপ, বুটিক হাউজ, পার্লার। সময়ের হাত ধরে ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০১৬ সালের দিকে রাজধানীর অন্যতম বিনোদন এলাকা হিসেবে আকর্ষনীয় ৩০০ ফিটে গড়ে তোলে একটি ফাস্ট ফুডের দোকান।
অন্তত ১০০০ (এক হাজার) লোকের কর্মসংস্থান করতে চান নারী উদ্যোক্তা ও সময়ের সফল ব্যবসায়ী মোসা. মরিয়ম নেছা ববি। এখন তার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করছেন প্রায় ৩শতাধিক মানুষ। এত মানুষ তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীতে কাজ করে ভাল আছেন, আরো ভাল ভাবে বাচার স্বপ্ন দেখেন তারা। এই আবেগ, এই ভাল লাগা কাজের প্রতি আরো বেশী মনোযোগী করে তোলে সফল এই নারী উদ্যোক্তাকে। তিনি সবাইকে সাথে নিয়ে আরো অনেক দূরে এগিয়ে যেতে চান। নিজে স্বপ্ন দেখেন। অপরকে স্বপ্ন দেখাতে চান।
ব্যবসা সবে জমে উঠতে শুরু করেছে এ সময় একটি বড় আঘাত আসে ববির ব্যবসায়ী জীবনে। রাস্তা সম্প্রসারণ কাজে সরকার রোডসাইডের সব স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়। সেই সাথে ভাঙ্গা পড়ে ববির স্বপ্নের দোকানটি। একটু থামকে যাওয়ার কথা। কিন্তু না। অদম্য ববি নতুন সাহসে সামনে এগোতে শুরু করেন। বলা চলে এই স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনাই তাকে নতুন স্বপ্নের দিগন্তে নিয়ে যায়। এ সময় তার ব্যবসায়িক ধারণা ও কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন তার এক নিকট আত্মীয় ধানমন্ডির বাসিন্দা কামাল উদ্দিন আহমেদের সাথে। তার আগ্রহে কামাল উদ্দিন ববির সাথে ব্যবসা করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সে আগ্রহের ফলে জন্ম হয় দ্য ক্যাফে রিও লি. নামক রেস্টেুন্টের। ধানমন্ডির ঝিগাতরায় ৪ হাজার স্কয়ার ফিটের বিশাল ফ্লোরে এটি যাত্রা শুরু করে। কামাল উদ্দিন আহমেদ ৪০ শতাংশ ব্যবসার মালিক হন।
এর পর থেকে ব্যবসা দ্রুত বাড়তে থাকে। দ্যা ক্যাফে রিও ধানমন্ডিতে দুটি, ও উত্তরায় একটি শাখা খুলে বসে। এ সময় ববির সাফলে আরো অনেকেই তার সাথে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। একের পর এক প্রস্তাব আর সম্ভাবনা এসে ধরা দিতে থাকে ববির হাতে।
২০২০ সালের শেষের দিকে তার নেতৃত্বে জন্ম হয় আরো একটি কোম্পানীর। যার নাম রিও লাউঞ্জ। গুলশানের পিংকসিটিতে রিও লাউঞ্জ রেস্টেুরেন্ট যাত্রা শুরু করে। করোনার ধকল কাটিয়ে ববির নেতৃত্বে তার সকল উদ্যোগ সামনের দিকে সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে।
এসকল খাতে সফলতার পর ববি এখন বাংলাদেশের অপর সম্ভাবনার খাত পর্যটনের বিকাশে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে কাজ শুরু করেছেন। দেশের মানুষকে দেশ দেখানোর অভিপ্রায় নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন রিও ট্রিপ নামের ট্রাভেল এজেন্সি। এর মাধ্যমে দেশ ব্যাপি পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দ্য ক্যাফে রিওর শাখা খুলে সেবার দিগন্ত প্রসারিত করেত চান তিনি। ববির স্বপ্ন এগিয়ে যাক। বেড়ে উঠুক ববির মতো হাজারো নারী উদ্যোক্তা। যাদের হাত ধরে নতুন করে স্বপ্ন দেখবে বাংলাদেশ।
সরকারের নারীর ক্ষমতায়ন নীতি আর সাহসী নারীদের অংশ গ্রহণে অচিরেই বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় রুপায়িত হবে। সেই অভিযাত্রার নেতৃত্বের সারিতে ববি নি:সন্দেহে একটি মডেল নাম হিসেবে পরিচিতি পাবে এটা সবার প্রত্যাশা।