আবু তাহের বাপ্পা : আইনের প্রকাশ্য লংঘনের মাধ্যমে দেশের সব চেয়ে বড় অর্থ খাত বীমা কোম্পানীগুলির শীর্ষ পদে চলছে ভারপ্রাপ্তদের দৌরাত্ব।এতে এখাতে বাড়ছে দূর্নীতি বাড়ছে অনাস্থা। সেই সাথে দক্ষতা, দূরদর্শিতা, গবেষণা ও সুশাসনের অভাবে সম্ভাবনার বীমাখাতে বিরাজ করছে এক ধরণের অস্থিরতা। কিছু দূর্নীতিবাজ সুযোগ সন্ধ্যানীরা এখানে কায়েম করেছে দৌরত্বর কালো অধ্যায়। সেই সাথে দিনকে দিন বাড়ছে কালো বিড়ালদের সংখ্যাও। ফলে অনেকটাই লুটপাট নির্ভর হয়ে উঠেছে ননলাইফের পাশাপাশি লাইফ বীমার বিশাল ক্যানভাস।
অনুসন্ধ্যানে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে এ সব কালো বিড়ালদের একজনের পর আর একজনের ভয়াবহ দূর্নীতি, জালিয়াতি ও লুটপাটের গা শিউরে ওঠার মতো তথ্য। বিশাল অংকের অর্থ লেনদেনের এসব কোম্পানীতে নির্বাহী কার্মকর্তা বা সিও বা ব্যস্থাপনা পরিচালকের বড় অংশই এখন ভারপ্রাপ্ত হওয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও জনআস্থা অর্জনে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কোম্পানীগুলো। ফলে প্রশ্ন বিদ্ধ হচ্ছে বীমা খাতের পরিচালনা দক্ষতা।
পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধ্যানে দেখা যায়, একজন ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিও আমানতকারিদের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে পরিচালনা পর্ষদের ব্যক্তিদের স্বার্থরক্ষা ও তাবেদারি করেই নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সচেষ্ট থাকেন। এ সময় পর্যন্ত লাইফ বীমা খাতে ভার প্রাপ্তএমডি বা সিও এর সংখ্যা মোট লাইফ বীমা কোম্পানীর অর্ধেকেরও বেশী । আবার এ সকল এমডিদের বিষয় সম্পত্তি ও বিলাসী জীবনের হিসেব সামনে আসলে যে কারো চোখ ছানাবড়া হওয়ার কথা। এক একজন বীমা কোম্পানীর এমডি বা সিওদের রয়েছে নামে বেনামে শত শত কোটি টাকা। কারো কারো রয়েছে শত কোটি টাকা মূল্যের বাড়ী, মার্কেট। রাজধানীর আশ পাশ জুড়ে কারো কারো নামে বেনামে রয়েছে বিঘা বিঘা জমি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ কোন কোন কর্মকর্তার নামও উঠে আসছে এসব ম্লিওনার বা ব্লিওনার ক্লাবের সদস্য হিসেবে। এ নিয়ে কখনো কখনো পরিচালনা কমিটির সাথে ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন কোন সদস্য মুখোমুখি হলে সেখানে রহস্য ঘেরা খুনের অভিযোগও সামনে আসতে শুরু করেছে।
তথ্য অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, দেশের বীমা খাতে এ মুহর্তে কত জনবল কাজ করছে তার কোন তথ্যভিত্তিক ডাটা নেই বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইডিআরএ) বা ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশনের হাতে। কর্মির হিসাব রাখতেই চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে এ খাতটি। তাহলে পাবলিক মানির গ্যারান্টি দেয়া এ খাতের নিয়ন্ত্রকদের দ্বারা কতটা সম্ভব সেও এক অমীমাংসিত প্রশ্ন। অন্য একটি বিষয় হচ্ছে এখাতের কোম্পানীগুলো কে কাকে কোন নিয়মে কতটা কমিশন দিয়ে পলিসি আনছে সে ব্যাপারেও নেই কোন ডাটা বা পরিসখ্যান। কিছু থাকলেও সে নিয়ম না মানলে তেমন কিছুই করার নেই যেন কতৃপক্ষের। এ কারণে কোন কোম্পানী ১৫শতাংশ আবার একই জাতীয় প্রডাক্ট বা পলিসিতে অন্য কোন কোম্পানী ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিয়ে কাজ নিচ্ছে। এটা কিভাবে সম্ভব। তার কোন জবাবও নেই নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছে।
এ সব বিষয়ে বরাবরই গা ছাড়া জবাব দিয়ে চলেছে আইডিআর এর কর্তারা। দেখি দেখবো। হবে হচ্ছে টাইপের সব উত্তর।
দুঃখ জনক বাস্তবতা হচ্ছে বীমা খাতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের চেয়ে শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিদের বড় সময় যাচ্ছে এ খাতে তাদের প্রতিযোগি কাউকে হঠানোসহ বিশাল অর্থভান্ডার লুটপাটের নানা কুটকৌশলী মিশনে। সম্প্রতি অর্থখাতের কালো অধ্যায় হিসেবে ফারইস্ট লাইফ ও ডেল্টা লাইফ দূর্নীতি সামনে আসার পর বীমা খাতের দূর্নীতির কিছু খন্ড চিত্র সামনে আসলে এ খাতে কারেকশনের প্রশ্নটিও সামনে আসতে শুরু করে। কিন্তু দুঃজনক বাস্তবতা হচ্ছে এতে মোটেও পাত্তা দিচ্ছেনা নিয়ন্ত্রক সংস্থার লোকজন। তারা বরং আগের নিয়মকেই প্রাধান্য দিয়ে চলেছে। বীমা আইনে স্পষ্ঠ্য ভাবে বলা আছে কোন কোম্পানীতে তিন মাসের বেশী সময় একজন ভারপ্রাপ্ত সিও থাকতে পারবে না। যদি পরিচালনা পর্ষদ মনে করেন তাহলে বিশেষ বিবেচনায় সেই ভারপ্রাপ্তের সময় আরো তিনমাস বাড়াতে পারবেন। কোন ক্রমেই এর বেশী নয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে অনেক কোম্পানীর এমডি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কর্মকান্ড পরিচালনা করে সেখানে লুটপাটের মহারাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে চলেছেন।এ ব্যাপারে আইডিআরএ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কেন নিচ্ছেনা সে প্রশ্নেরও সন্তোষজনক কোন জবাব নেই। জবাব একটাই এখাতে দক্ষ লোক নেই।
তথ্য অনুসন্ধ্যানে প্রতিয়মান হচ্ছে, শীর্ষ পর্যায়ে বসার পরই ভারপ্রাপ্ত যে কেউই নতুন করে লুটপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পূর্বে ঘটে যাওয়া কালো অধ্যায়র পদা উম্মোচন করার চেয়ে সঞ্চিত ভান্ডার তসরুপের খেলা চলছে এ খাতে। ডেল্টা লাইফের দূর্নীতি উদ্ধারে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হলেও এখানে কার্যকর কোন কিছু দৃশ্যমান হয়নি। কিন্তু আইনি লড়াইসহ বিভিন্ন অজুহাতে প্রশাসক নিয়োগের পর প্রাতিষ্ঠানের যে পরিমান অর্থ খরচ হয়ে গেছে এবং হচ্ছে অদুর ভবিষ্যতে সে বিষয়ে হয়তো নতুন তদন্ত কমিটি করার প্রয়োজন দেখা দিবে।
তথ্য অনুসন্ধ্যানে জানা যাচ্ছে, অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে সুশাসনের বদলে ব্যক্তির ইচ্ছেই যেন শেষ কথা হয়ে উঠেছে। একারণে এ বীমার বিকাশের দিকে নজর না দিযে ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষায় অনেকটাই বেপরোয়া আচরণ করে চলছে এ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্টরা । কারো অতীত জীবনের কেলেঙ্কারি ঢাকতে অপরজনকে শায়েস্তা করতে ব্যবহৃত হচ্ছে সরকারের বেশীরভাগ মেশিনারিজ। ফলে বীমা খাতের বিকাশে সরকারের নেয়া কোন উদ্যোগই কার্যকর হওয়ার বদলে দিনকে দিন এখাতে নানা বির্তকই শুধু বাড়ছে। দেশের বীমা খাতের অর্থনৈতিক সূচকের বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে এখাতের প্রবৃদ্ধি শুধূ লজ্জাজনকই নয় হতাশার কালো আঁধার ঘিরে আছে এর প্রতিটি পরত। অথচ একটি উন্নয়নশীল বা উন্নত অর্থনীতি ভিত্তিক দেশ গড়ার পূর্ব শর্তই হচ্ছে বীমা খাতের শক্ত অবস্থান। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশের সাধারণ বা লাইফ বীমা খাত কেন শক্ত ভিত্তি পেল না! সেই সাথে কেনই বা এ খাতটি জনআস্থা অর্জনে ব্যর্থ হলো, উত্তরণের বদলে কেন এখাত আরো বেশী আস্থার গভীর সংকটে পড়ে আছে এসবসহ বীমা খাতের নানা দিক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা আইডিআর এর কর্মকান্ড ঘিরে নানা প্রশ্ন সামনে আসতে শুরু করেছে। বীমা খাতের বোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বলা হয়, ইন্স্যুরেন্স খাত শক্তিশালী হলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়। ইন্স্যুরেন্স গ্যারান্টি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন বীমা খাতে প্রবৃদ্ধির হার পয়েন্ট জিরোর নিচে। সেই লজ্জাজনক অবস্থান থেকে বের হয়ে ইন্স্যুরেন্সে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষে কাজ করছে
প্রতিষ্ঠানগুলো এমন দাবি করলেও সে অর্জন কতটা সম্ভব হবে তা কেবল সময়ই বলতে পারবে। বীমা খাতে কমিশন বন্টন হার নির্ধারণ ও কার্যকর না হওয়াকে এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা আনহেলদি কমপিটিশন হিসিবে দেখছেন। আর এই আলহেলদি কম্পিটিশনের সাথে রয়েছে এখাতে গভীর ভাবে ইমেজ সংকট। সেই ইমেজ সংকট কাটাতে কার্যকর কোন উদ্যোগই নিতে পারছে না নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কর্তারা। না পারার কারণ হিসেবে তাদের অদক্ষতা ও অযোগ্যতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু তৈল মর্দনে পারদর্শিতার কারণে এবং নানা ভাবে অনৈতিক সুবিধা দানে সিদ্ধ হস্ততার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েও বার বার টিকে যাচ্ছেন এসব সৌভাগ্যবান কর্মকর্তারা। যা গোটা বীমাখাতকে দিনকে দিন সংকটের গভীর থেকে গভীরতর অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে