1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন

ডলারের ঘাটতি বাড়ছেই

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২
  • ১৩৩ বার দেখা হয়েছে

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে দেশের ডলার বাজারে চলা সংকট প্রতিদিন বাড়ছে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল আকার নিয়েছে যে, বৈদেশিক বাণিজ্যে দেশীয় ব্যাংকগুলো বিদেশি ব্যাংকের এলসি নিশ্চিতকরণের প্রতিশ্রুতি পূরণে বিলম্ব করছে। ফলে এলসি কনফার্মেশন ফি বেশি দিতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। ডলার ঘাটতি আরও বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির খরচও বাড়ছে।

কভিডের পর ইউরোপজুড়ে যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দিন দিন সংকট বেড়েই চলেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, আন্তঃব্যাংক বাজারকে আরও স্বাধীনভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন, যাতে তারল্যের প্রবাহ নির্বিঘ্ন থাকে। কোনো ব্যাংকেরই যাতে নির্ধারিত সময়ে অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি পূরণের সক্ষমতা নষ্ট না হয়। এসবের মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে আমাদের ব্যাংকগুলোর সুনাম ধরে রাখতে এবং আরও বাড়াতে সক্ষম হবে। দেশের একাধিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  দেশের ব্যাংকগুলো নির্ধারিত তারিখে অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি পূরণে বিলম্ব করছে। নির্ধারিত সময়ে অর্থ পরিশোধের যে কোনো বিলম্বের কারণে অপর পক্ষের কাছ থেকে ডিফল্ট (ঋণ পরিশোধে সক্ষম নন) হিসেবে চিহ্নিত হতে হয়। এমন ঘটনা নিয়মিত ঘটতে থাকলে সেই বাজার বিনিয়োগকারী কিংবা ঝুঁকি গ্রহণকারীদের কাছে আকর্ষণ হারায়। শেষ পর্যন্ত এই পরিস্থিতি এলসি কনফার্মেশন করার খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে তা বাণিজ্য এবং ঋণের জন্য অর্থ আদান-প্রদানে ডিসকাউন্টিংয়ের সুযোগ কমিয়ে ব্যয় বাড়িয়ে তুলছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর এলসি কনফার্মেশন খরচের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভারতের ব্যাংকগুলোর এ বাবদ ব্যয় শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে শূন্য  দশমিক ৭৫ শতাংশ। পাকিস্তানে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর এলসি নিশ্চিত করার ব্যয় অনেক বেশি, ২ থেকে ৩ শতাংশ। পাকিস্তানের সার্বভৌম রেটিং (sovereign rating) বি-৩, যা বাংলাদেশের বিএ-৩ তুলনায় তিন ধাপ নিচে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর জন্য এলসি কনফার্মেশন খরচ বেড়েই চলেছে এবং এটা হচ্ছে নির্ধারিত সময়ে অর্থ পরিশোধের  প্রতিশ্রুতি পূরণে ক্রমাগত বিলম্ব হওয়ার কারণে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের মোট আমদানির ৩০ শতাংশের এলসি কনফার্মেশন হয়, তবে দশমিক ৫০ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। ব্যয়সাশ্রয় হবে বছরে ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সেই সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত ঋণের ক্ষেত্রে একই পরিমাণে ব্যয়সাশ্রয় করা সম্ভব, শুধু নির্ধারিত সময়ে অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি পূরণ এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে আচরণগত উন্নয়নের মাধ্যমে।

সম্প্রতি ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষত মার্কিন ডলারের আরও প্রবাহ এবং তারল্য নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে রপ্তানি ও রেমিটেন্সকে উৎসাহিত করতে হবে। নিরুৎসাহিত করতে হবে অদরকারি-বিলাসী পণ্য আমদানি। আর এসব করার সর্বোত্তম কৌশল হলো মুদ্রা বিনিময় হারকে বাজারের চাহিদা এবং সরবরাহ অনুযায়ী নির্ধারণ করা। এই পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই রপ্তানিকারকদের তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এবং মুনাফা বাড়ানোর জন্য সর্বোত্তম মূল্য পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে যাঁরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠান, তাঁদের জন্য আকর্ষণীয় হারে প্রণোদনা দিতে হবে। যাতে এটা তাঁরা সামাজিক নিরাপত্তা এবং অন্যান্য উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করতে পারেন।

সূত্র মতে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কৃত্রিমভাবে অবমূল্যায়িত করা একটি পুরনো কৌশল। এমনটা করা হলে বাড়তি আমদানিকে উৎসাহিত করা হবে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, অনেক দেশ নিজেদের মুদ্রার মান অবমূল্যায়নের অনুমতি দিয়েছে। গত এক দশকে টাকার মান অন্যান্য অনেক মুদ্রার তুলনায় বেশ শক্তিশালী অবস্থানে ছিল। গত ১০ বছরে ভিয়েতনামের মুদ্রা ডং-এর অবচয় ঘটেছে ১১ শতাংশ, ভারতীয় রুপির ৪০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ান রুপি ৫৫ শতাংশ, পাকিস্তানি রুপির ১১৪ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কান রুপি ১৭৫ শতাংশ। আর টাকার ক্ষেত্রে এই হার ছিল মাত্র ১৩ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত বাজারের চাহিদা এবং সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে টাকার বিনিময় হার সামঞ্জস্যের অনুমতি দেওয়া। ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট (আরইইআর) ছিল ১১৬ দশমিক ৩৮।

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, বাজারে ডলার সংকট নিয়ে কিছুটা আতঙ্ক ছিল। পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। কিছুটা আতঙ্কের কারণে কয়েক দিন বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। তবে এখন দিনদিন উন্নতি হচ্ছে। সম্প্রতি আমাদের রপ্তানি বেড়েছে, রেমিট্যান্স বেড়েছে। ফলে আগামীতে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। বাজারে ডলারে এখন সে অর্থে কোনো সংকট নেই। ব্যাংকের হাতেও ডলার আছে। কিছু ব্যাংক সমস্যায় থাকতে পারে, দ্রুত সেটাও কেটে যাবে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি