সরকারি ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়ম চিহ্নিত হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি, জ্বালানি তেল ক্রয়, খাদ্য বিতরণ, ব্যাংক, বিমা ও রাজস্ব খাত ঘিরে এ অনিয়ম হয়। পাশাপাশি কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য বিদেশি প্রকল্পে সরঞ্জাম কেনাকাটায় অনিয়ম ধরা পড়ে। করোনাকালেও থেমে ছিল না শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও গরিব মানুষের খাদ্য বিতরণের টাকা ব্যয়ে অনিয়ম। যা নিরীক্ষা বিভাগের ২০২০-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয় থেকে শিগগিরই আর্থিক অনিয়মের এ প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হবে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও অডিট আপত্তির সম্পূর্ণ অর্থ সমন্বয় হবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে দুর্নীতির সামান্য কিছু অর্থ আদায়ের পর বাকিগুলো অনিষ্পন্ন অবস্থায় ঝুলে থাকে বছরের পর বছর। হয়তো এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।
এ বছর যেসব আর্থিক অনিয়ম শনাক্ত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে কয়েক ধরনের কৌশলে এগুলো সংগঠিত হয়। এরমধ্যে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিদেশি প্রকল্পে সরঞ্জাম কেনাকাটা, করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা, নিয়মবহির্ভূত ব্যাংক ঋণ ইস্যুর মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। পাশাপাশি পণ্য রপ্তানির নগদ সহায়তা, আয়কর হিসাবে গরমিল ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় অমিল, সাবরেজিস্ট্রার অফিসগুলোর হিসাবেও অনিয়ম ধরা পড়েছে। এসব দুর্নীতি ও অনিয়মকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি বা লোকসান হিসাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, অডিট আপত্তির অঙ্ক থেকে অনুমেয় যে বাংলাদেশের দুর্নীতির গভীরতা কত ব্যাপক। অনিয়ম উদ্ঘাটনে সিএজি অফিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর উচিত এসবের বিরুদ্ধে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। অনিয়মের যে ক্ষতি তা উদ্ধার করা। আশা করব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকারি হিসাব কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট মহল অনিয়মের নিরীক্ষা প্রতিবেদনকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেবে। এর সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতা ও শাস্তি নিশ্চিত করেন।