1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০২:৪৬ অপরাহ্ন

নজিরবিহীন এ্যানেস্থেসিয়ার অপপ্রোয়োগ, খতনায় বাড়ছে শিশু মৃত্যুঝুঁকি

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১৬৪ বার দেখা হয়েছে
নজিরবিহীন এ্যানেস্থেসিয়ার অপপ্রোয়োগ, খতনায় বাড়ছে শিশু মৃত্যুঝুঁকি
★ ইউরোসার্জন ছাড়াই খতনা করাচ্ছে ক্লিনিক গুলো  ★ নারকোটিক পারমিটহীন ক্লিনিক গুলোর ভুলভাল এ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ ★ ডাক্তারদের সময় বাঁচাতে অজ্ঞান করে খতনা করানো 

মুস্তাকিম নিবিড়ঃ 

বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে খৎনার প্রচলন। ধারণা করা যায় আনুমানিক ৩৬০০ বছর পূর্বে মিশরে ফারাও সাম্রাজ্যের আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রচলনের মাধ্যমে খতনা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। মূত্র প্রবাহে নানান জটিলতা থেকে আরোগ্য লাভে খতনা করানো হয়ে যায় এক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি। পরবর্তীতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক দিন-ই ইসলাম প্রচলিত হবার পর খতনাকে করা হয় বাধ্যতামূলক, যাকে মুসলমানী বলা হয়ে থাকে। মুসলিম শিশুর জন্মের পর খতনা করানো ফরজ একটি বিষয়। তাই মুসলিম দেশগুলো সহ গোটা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় এক কোটি মানুষের খৎনা করা হয়। মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশে সুন্নতে খতনা খুবই সাধারণ একটি বিষয়। হাজম দিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে খতনা করানো হতো একসময়, এখন তা করানো হচ্ছে ডাক্তারের মাধ্যমে। পুরুষাঙ্গে খতনা করানো হলেও এক্ষেত্রে ইউরোলজি সার্জনদের দ্বারা খতনা করানোর একটা বাধ্যবাধকতা থাকা প্রয়োজনীয়। কিন্তু দেশের অর্থোপেডিক সার্জনরাও করছে সুন্নতে খাতনা। সুন্নতে খাতনা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শতকরা দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের কেই উপযুক্ত মনে করা হয়। যুগ যুগ ধরে সনাতন পদ্ধতি এবং ডাক্তারদের মাধ্যমে শিশুদের খতনা করা হলেও সম্প্রতি খতনা করতে গিয়ে দুইটি শিশুর মৃত্যুতে শোকাহত সারা দেশ। রাজধানীতে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যু নিয়ে আলোচনার মধ্যেই একইভাবে আরো এক শিশুর মৃত্যু ঘটে।

মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মঙ্গলবার রাতে খতনা করাতে গিয়ে ওই শিশুর মৃত্যু হয়। আহনাফ তাহমিন আয়হাম নামের ১০ বছর বয়সী ছেলেটি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা ব্যবসায়ী ফখরুল আলম, খিলগাঁওয়ে তাদের বাসা। সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ এনে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন ফখরুল। পরে ওই হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

একটি শিশু যে বয়সে তার হৃদয়ের কোমলতা দিয়ে নিজ বাবা-মা সহ আশপাশের সকলের হৃদয় জয় করে নেয়। সেই বয়সেই সুন্নতে খতনা করানো হয় তাদের। খুব প্রাচীন যুগ থেকেই সেই হৃদয় জয় করা শিশুটির সুন্নতে খতনার অনুষ্ঠানও করা হয় জাঁকজমক ভাবে, নিজ পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজনরা সুন্নতে খৎনাকে কেন্দ্র করে মেতে উঠেন আনন্দ উল্লাসে। সম্প্রতি খৎনা করতে গিয়ে একই মাসের দুইটি শিশুর মৃত্যুর কারণে মৃত শিশুর বাবা মা আত্মীয়-স্বজন এমনকি গোটা জাতি শোকে মূর্হমান হয়ে আছে।

দেশে অনিবন্ধিত বহু সংখ্যক হাসপাতাল রয়েছে যাদের নেই নারকোটিক পারমিট। এ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহারে তাই তারা মানছে না কোন বিধিমালা। নেই কোন অভিজ্ঞ এ্যানেস্থেসিয়াসিস্ট। ডাক্তার ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং শর্টকাটে শিশুর খতনা সম্পন্ন করতে কোন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই প্রয়োগ করছে ঘুমের ইনজেকশন এবং এ্যানেসথেসিয়া। যাতে করে শিশুটি ঘুমিয়ে পড়লে খুব দ্রুত খৎনার কাজটি সেরে ফেলতে পারে ডাক্তার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা একবারও ভেবে দেখেছেন কি, শিশুরা চঞ্চল ও একটু কোমল হৃদয়ের হয়ে থাকে, তাদেরকে বুঝিয়ে মনোবল বাড়িয়ে খৎনা করতে উদ্বুদ্ধ না করে ডাক্তারগন কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই শিশুদের অজ্ঞান করে খতনা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় ইদানিং ডাক্তারগণ অনেক শিশুকে সেডিল ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে খতনা করেন। কিন্তু শিশুটির ঘুম ভাঙবে কখন? এ্যানিসথেসিয়া প্রয়োগ করে যে শিশুটিকে অজ্ঞান করা হচ্ছে, সেই শিশুটির জ্ঞান ফিরার শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে কি? এসব বিষয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কম সময়ে ঝামেলা মুক্ত অপারেশন করার জন্য ডাক্তাররা শিশুদের অজ্ঞান করেই খৎনা করে চলছে।

“ঘুম পাড়িয়ে শিশুর খতনা, বুঝবেন আপনার শিশু কোন ব্যথা ” এরকম চমকপ্রদ প্রচারণা চালিয়ে খৎনা করে চলছেন ডাক্তার ও মেডিকেল কর্তৃপক্ষ , ঘুমপারিয়ে খতনা করে বাগিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ খতনার খরচের থেকে দ্বিগুণ টাকা। যেমন সারা বিশ্বে ৯৫ ভাগ গর্ভবতীর নরমাল ডেলিভারি হলেও বাংলাদেশে ৯৫ ভাগ গর্ভবতীর হতে হয় সিজারের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার। ঠিক তেমনি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার তদারকির দুর্বলতার ফাক ফোকর দিয়ে আরেকটি প্রথা চালু হচ্ছে শিশুকে অজ্ঞান করিয়ে খতনা করা। অজ্ঞান করানোর জন্য অভিজ্ঞ অ্যানেসথেসিয়াস ছাড়াই যত্রতত্র করানো হচ্ছে শিশুর সুন্নতে খাতনা। অজ্ঞান করার পর জ্ঞান ফেরার সম্ভাবনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই অজ্ঞান করে শিশুর খতনা করার কারণেই সম্প্রতি দুটি শিশুর করুন মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। যাতে নড়ে চড়ে বসে গোটা দেশবাসী।

গর্ভবতী মায়েদের সিজার করা ডাক্তারদের বানানোই একটা ট্রেন্ড, যার থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা। সুন্নতে খতনা দ্রুত শর্টকাটে সারার জন্য ডাক্তাররা করছে ছোট শিশুদের অজ্ঞান করার মত ভয়ংকর পন্থার অবলম্বন। বেশিরভাগ ডাক্তারই এ ব্যাপারে বলছে বাবা মা বাচ্চার কান্নাকাটি সহ্য করতে পারে না তাই অজ্ঞান করা হয়। এজন্য দোষারোপ পাল্টা দোষারোপ এর উৎসব। যার যাতা কলে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে শিশু আয়ানরা। নির্বাক হচ্ছে তাদের আত্মীয়-স্বজন হতবাক হচ্ছে দেশ ও জাতি। সুন্নতে খাতনার মধ্যে সাধারণ ব্যাপারটি কেও এখন জটিল বলে মনে হচ্ছে।

পুরুষাঙ্গে খৎনা করা ইউরোলজি বিভাগের দায়িত্ব, কিন্তু দেশের ৯০ ভাগ খতনা করছে অন্যান্য বিষয়ে পারদর্শী সার্জনগণ। তাই পুরুষাঙ্গ বিষয় ধারণা কম থাকায় সাধারণ সার্জনরা করছে ভুলভাল অপারেশন। যাতে শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।খৎনা করতে গিয়ে ভুল সার্জারির কারণে  এ অবদি অনেক শিশুরই হারাতে হয়েছে পুরুষাঙ্গের স্বাভাবিকতা। সেজন্য সুন্নতে খতনার বিষয়ে একজন ইউরো সার্জনের পরামর্শে থাকাই মঙ্গলজনক। খতনার বিষয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রনোয়ন করা এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি