1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন

অস্তিত্ব সংকটে নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদী 

আরএম সেলিম শাহী
  • আপডেট : বুধবার, ৫ মে, ২০২১
  • ২৯৭ বার দেখা হয়েছে
শেরপুরঃ
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার খরস্রোতা পাহাড়ি ভোগাই নদী কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু নজরদারি ও সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। নানামুখী প্রতিবাদের পরও বালু নেই এমনসব মৌজা বালু মহাল হিসেবে ইজারা প্রদানে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে নদী রক্ষার আন্দালনের নেতৃবৃন্দের মাঝে। অন্যদিকে বালু থাকার পরও বেশকিছু মৌজাকে বালু মহালের আওতায় না আনায় ওইসব এলাকায় গতিপথ পাল্টে ফেলছে ভোগাই নদী।
ভোগাই বালু মহাল, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী ও পরিবেশবাদীসহ অসংখ্য মানুষের প্রতিবাদের মুখে পুনরায় ১৪২৮ সালের জন্য এক বছর মেয়াদী ইজারা দেওয়া হয়েছে। মন্ডলিয়াপাড়া, আন্দারুপাড়া, ফুলপুর ও কেরেঙ্গাপাড়া এ চারটি মৌজায় ১২.৩২ একর জায়গায় দেওয়া হয়েছে ভ্যাট ও অন্যান্যসহ প্রায় ৯০ লাখ টাকার এক বছর মেয়াদী বালু উত্তোলনের অনুমোতি। বাস্তবে যেসব মহলে উত্তোলনের জন্য তো দূরের কথা নদীর রক্ষার ন্যূনতম বালুও নেই। ইতোমধ্যে গেল বাংলা সনে বালু সংকটে ওইসব মৌজার নদী তীরবর্তী ফসলি জমি গর্ত করে বালু উত্তোলন যেখানে পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেখানেই পুনরায় বালু মহাল হিসেবে দেওয়া হয়েছে ইজারা।
অন্যদিকে নদীর যেসব এলাকায় এখনও বালু মওজুদ আছে সেসব স্থানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বালু উত্তোলন। ওইসব মৌজা বা স্থানসমূহ রাখা হয়েছে বালু মহালের বাইরে। নদীর বালু মহাল ইজারায় এমন অপরিপক্ক সিদ্ধান্তে অস্তিত্ব সংকটে এখন ভোগাই। যে নদী এক সময় মানুষের ভোগান্তির নাম ছিল সে নদীকে এখন ভোগাচ্ছে কতিপয় বালু ব্যবসায়ী। আর সে ব্যবসায় সুযোগ তৈরি হয়েছে কর্তৃপক্ষের সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোগাই নদীর কালাকুমা ও হাতিপাগারমৌজার কিছু এলাকা এখনও বালু উত্তোলনের উপযোগী। নদীর প্রকৃত গতিপথ রক্ষায় বালু উত্তোলন জরুরী গোবিন্দনগর (বর্তমানে খালভাঙ্গা সংলগ্ন), ফকিরপাড়া ও মরিচপুরান মৌজায়। বিশেষ করে, পরবর্তী তিনটি মৌজার কিছু কিছু এলাকা ড্রেজিং জরুরী। বছরের পর বছর ধরে ওইসব মৌজার কিছু কিছু অংশে বালু ভরাট হয়ে পাল্টে গেছে নদীর গতিপথ। একদিকে জেগেছে বিশাল বালুচর অন্যদিকে মানুষের ফসলি জমি থেকে শুরু করে বসতভিটা চলে গেছে নদীগর্ভে। অথচ কর্তৃপক্ষ এ তিনটি মৌজার কোনোটিকেই এখনও পর্যন্ত বালু মহাল হিসেবে ঘোষণা করেনি। ফলে ভোগাই নদীর কোথাও বালুচরে বিস্তৃত জমি জেগে আছে কোথাও বা ফসলি জমি খুঁড়ে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।
গোবিন্দনগর গ্রামের ভোগাই নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন যাবত ভোগাই নদীর খালভাঙ্গা অংশে ভরাট হয়ে গোবিন্দনগর অংশে ব্যাপক ভাঙন চলছে। ইতোমধ্যে বহু ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে স্কুল-মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এমতাবস্থায় ওপারের (খালভাঙ্গা অংশে) ড্রেজিং করা হলে পুনরায় নদী তার অবস্থানে ফিরে যেতো। রক্ষা পেতো গোবিন্দনগর গ্রাম। একই ভাষ্য ফকিরপাড়া ও মরিচপুরান গ্রামের নদী তীরবর্তী ভুক্তভোগীদের।
সম্প্রতি ‘নদী বাঁচাও নালিতাবাড়ী’ শ্লোগানে নালিতাবাড়ীর সুধী সমাজ ভোগাইয়ের চলতি সনের ইজারা বাতিলের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি পেশ ও শহরে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন পালন করে। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে মতামতও গ্রহণ করেন।
‘নদী বাঁচাও নালিতাবাড়ী বাঁচাও’ আন্দোলনের অগ্রণী ভূমিকায় থাকা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম খোকন জানান, নালিতাবাড়ীর সাবেক ইউএনও আরিফুর রহমান সাহেব ‘নদী বাঁচাও নালিতাবাড়ী বাঁচাও’ স্লোগানে ভোগাই রক্ষার দাবিতে স্থানীয় জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর থেকে আমরা ভোগাই নদী রক্ষায় বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়ে এলেও কর্তৃপক্ষ ইজারা প্রদান করে আসছেন। কর্তৃপক্ষ যদি সত্যিকার অর্থেই আন্তরিক হতেন তবে অবশ্যই আমাদের দাবি বিবেচনা করতেন।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেলেনা পারভীন বলেন, ভোগাই নদীর বালু মহাল চলতি বাংলা সনে ইজারা দেয়া তফসিলে বর্ণিত মৌজা পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। যদি কোনো মৌজা ইজারা দেয়ার উপযোগী থাকে বা পরিবর্তন করতে হয় তাহলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি