1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন

ঘরে ৭০০ টাকা ছিল সেটাও নিতে পারেননি শফিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ৭ জুন, ২০২১
  • ২৪৫ বার দেখা হয়েছে
ঘরে ৭০০ টাকা ছিল সেটাও নিতে পারেননি শফিয়া
শফিয়াদের কণ্ঠে এখন কেবল আহাজারি

ছোট বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে উদ্ভ্রান্ত হয়ে দিগ্বিদিক ছুটছেন শফিয়া বেগম। সঙ্গে কান্না আর সব হারানোর আহাজারি। ভোরের আগুনে গোছানো ছোট্ট সংসারের সব তার পুড়ে ছাই। পুড়ে গেছে, স্বামীর সারাদিনের ঘামে ভেজা রোজগারের ৭শ টাকাও।

শফিয়া বেগমের বাড়ি গাইবান্ধার ভরতখালীতে। ৪ বছর ধরে রাজধানীর মহাখালী সাততলা বস্তিতে স্বামী, শ্বাশুড়ি আর সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছিলেন তিনি। শফিয়া ও তার শ্বাশুড়ি বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। স্বামী সাগরের রিকশার প্যাডেলে ঘোরে সংসারের চাকা। রোববার দিবাগত রাত সোয়া ৪টার দিকে পাশের ঘরে আগুন আর ধোঁয়া দেখে বাচ্চা কোলে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে পড়েন শফিয়া।

শফিয়া বেগম আহাজারি করে বলেন, কেউই কিচ্ছু নিয়া বাইরাইতে পারি নাই। কোনো রকম জীবনডা লইয়া বাইরাইছি। স্বামী কাল রাতে কর্ম কইরা ৭০০ডা টাকা নিয়া আইছিল, তাও পুইড়া গেছে। বাচ্চাডার একটা কাপড়ও নিতে পারি নাই। একটা গামছা শুধু নিতে পারছি। সরকার থেকে পাওয়া ২০ কেজি চাল, ৬ কেজি তেল, কিচ্ছু নিতে পারি নাই। সব পুড়ে শ্যাষ।
১৮টি ইউনিটের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন

শুধু শফিয়া-সাগরের পরিবার নয়, ভোরের আগুনে সব হারিয়ে দেড় শতাধিক পরিবারের বেদনা-আহাজারি আর কান্নার রোল এখন সাত তলা বস্তিতে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, সোমবার ভোর ৩টা ৫৯ মিনিটের দিকে সাত তলা বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আগুন ভয়াবহ রুপ নিতেই আরও চারটি ইউনিট যোগ দিয়ে একযোগে আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সামলাতে যুক্ত হয় ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৮টি ইউনিট। অগ্নিকাণ্ডের আড়াই ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

বস্তিবাসী জানান, আগুনের সূত্রপাত বস্তির পশ্চিম-দক্ষিণ দিক থেকে। এরপর দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে বস্তির উত্তর-পূর্ব দিকে। একে একে পুড়ে যায় দেড় শতাধিক ঘর।

আগুন লাগার পর বেশিরভাগ মানুষই কিছু নিয়ে বের হতে পারেননি। সন্তান কোলে স্রেফ এক কাপড়ে বেরিয়ে গেছেন তিনি। এমনই আরেক ক্ষতিগ্রস্থ সুরমা বেগম। তিনি স্বামী সন্তান নিয়ে থাকেন বস্তিতে। কাজ করেন পোশাক কারাখানায়।

কোনো রকমে টিভিটা নিয়ে বের হতে পেরেছেন তিনি

তিনি বলেন, ‘আগুন লাগছে ফজরের আজানের আগে আগে। আগুনের তাপে, চিৎকারে টের পাই আগুন লাগছে। এরপর বাচ্চাকে কোলে নিয়া কোনো রকম জীবন নিয়া বের হইছি। বার বার পুড়ছি। গত বছর ওই পারে ছিলাম। আগুন লাগার পর বাসা পরিবর্তন করে এই পাড়ে চলে আসি। এবার এখানেও পুড়লো সব।

মাহফুজা নামে আরেক ক্ষতিগ্রস্থ নারী বলেন, ‘সব পুড়ে ছাড়খার। পিন্দনে যা আছে এইটুকুই শেষ সম্বল। চিপা গলি, কিচ্ছু বাঁচাইতে পারলাম না। স্বামী কোম্পানিতে চাকরি করেন, গার্মেন্টেসের নাইট গার্ড। রাতে যখন আগুন লাগে তখন তিনি ডিউটিতে। আগুনের খবরে যখন ছুটে আসে, ততক্ষণে পুড়ে সব শেষ।’

আগুনের খবরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অবৈধ গ্যাস ও বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে।

সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, বস্তিতে টিনের ঘর অনেক বেশি হওয়ায় আমাদের আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আমাদের ১৮টি ইউনিট কাজ করেছে। এখন পর্যন্ত আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়, তবে শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে বলে আমরা ধারণা করছি।

আগুনের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে প্রচুর পরিমাণে অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন রয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করছি, এই দুইটার থেকে যেকোনো একটি কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ঘনবসতি এবং বেশি সেপারেশন থাকায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আগুনের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে আগুন নেভাতে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে। এছাড়া দাহ্য বস্তুর উপস্থিতি বেশি থাকায় আগুনটা বেশি ছড়িয়েছে।
আগুনের কারণ অনুসন্ধানে একজন ডেপুটি ডিরেক্টরের (ডিডি) নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে আগুনের প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি।

উল্লেখ্য, এর আগেও পাঁচ বার পুড়েছে সাত তলা বস্তি। ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ডিসেম্বরে এবং ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর রাজধানীর এ বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রতিবারই গ্যাস নয়তো বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত।

সৌজন্যে: ঢাকা পোষ্ট

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি