1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২০ পূর্বাহ্ন

এইচ টি ইমামের ডায়েরি

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : শনিবার, ৬ মার্চ, ২০২১
  • ৮২৬ বার দেখা হয়েছে

২০০৯ সাল। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ। আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। ১০ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় চমক দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার চেয়েও বড় চমক ছিল উপদেষ্টামন্ডলী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি শক্তিশালী উপদেষ্টামন্ডলীর নাম ঘোষণা করলেন। এইচ টি ইমাম, ড. আলাউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, ড. মশিউর রহমান ও মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী। সরকার গঠনের এক সপ্তাহের মধ্যেই বোঝা গেল, মন্ত্রীদের চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা অনেক ক্ষমতাবান। বিশেষ করে হোসেন তৌফিক ইমাম দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি হিসেবে আবিভর্‚ত হলেন। প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কে বসবেন, তা নির্ধারণ করতেন এইচ টি ইমাম। এ সময় তথ্য সচিব পদে বসানো হলো একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে। অনুজপ্রতিম শাবান মাহমুদ ওই সচিবের ঠিকুজি বের করলেন। এখন আওয়ামী লীগার হয়ে যাওয়া ওই সচিব জিয়াকে নিয়ে যে কবিতা লিখেছিলেন, তা প্রকাশ করে দিলেন। এ যেন হাটে হাঁড়ি ভাঙা। ওই সময় আমি ওই ঘটনা নিয়ে এক কলাম লিখলাম ‘সিংহাসনের পেছনে কার ছায়া।’ লেখা যেদিন প্রকাশিত হলো সেদিন সন্ধ্যায় অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী আমাকে ফোন করলেন। সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর একটি অসাধারণ গুণ হলো, তিনি লেখালেখি এবং সাংবাদিকতা বিষয়ে কোনো অনুরোধ করেন না। ফোনে তিনি জানতে চাইলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারি কি না।

সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী তখন থাকেন ধানমন্ডি ৬ নম্বরে। রাতে তাঁর বাসায় গেলাম। তিনি বললেন, এইচ টি ইমাম আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। উল্লেখ্য, সিংহাসনের পেছনে কার ছায়া লেখাটি ছিল মূলত এইচ টি ইমামকে ইঙ্গিত করে। তাঁকে সমালোচনা করে। সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীই প্রস্তাব দিলেন পরদিন তাঁর অফিসে দুপুর ১২টায় এইচ টি ইমামের সঙ্গে বৈঠক হবে। পরদিন ১২টার আগেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর কক্ষে আমি উপস্থিত হলাম। তাঁর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এলেন এইচ টি ইমাম। এইচ টি ইমামের সঙ্গে আমার পরিচয় দীর্ঘদিনের। কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা কখনো সুখকর ছিল না। নানা তর্ক-বিতর্কে ভরপুর থাকত। এইচ টি ইমাম এলেন সঙ্গে ছোট একটা ডায়েরি এবং কলম। আমি মন খুলে তাঁর বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করলাম, তিনি উত্তেজিত হলেন না, রাগ করলেন না। আমাকে জেলে দেওয়ার ভয়ও দেখালেন না। শুধু নোট নিলেন। কিছু কিছু ভুল স্বীকার করলেন। কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন। তারপর বললেন, ‘এরপর আমার বা সরকারের কোনো ভুল দেখলে, আমাকে বল। অনেক কিছুই হয়তো আমরা জানি না। কিন্তু এভাবে লিখলে সরকার বিব্রত হয়। একটা নতুন সরকার এসেছে, তাকে সময় দাও। আর তুমি তো জান, কী পরিস্থিতির পর দেশে গণতন্ত্র এসেছে।’ এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে তিনি শুধু নোট নিলেন, শুনলেন। আমি বিদায় নিলাম। আজ ভাবী, ওই সময় আওয়ামী লীগ বিপুল ক্ষমতাবান। হোসেন তৌফিক ইমামও সরকারের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তিনি চাইলেই ওই লেখার জন্য আমাকে জেলের ভাত খাওয়াতে পারতেন। আমাকে নানাভাবে হয়রানি করাতে পারতেন। কিন্তু এসব কিছু না করে তিনি সমস্যাগুলো শোনার চেষ্টা করলেন। নোট নিলেন।

বিস্ময়ের শেষ এখানেই ছিল না। কদিন পর তিনি ফোন করলেন। বললেন, তোমার সঙ্গে মোদাচ্ছেরের অফিসে মিটিংয়ের একটা ফলোআপ মিটিং করতে চাই। তুমি কবে সময় দেবে? পরদিন তাঁর হেয়ার রোডের বাড়িতে গেলাম। এবার দেখলাম, নোট বইয়ের সঙ্গে একটা কাগজ। ওই কাগজে প্রথম মিটিংয়ে আমি যা বলেছিলাম, তার সংক্ষিপ্তসার। পয়েন্ট ধরে ধরে তিনি প্রতিটি বিষয়ে প্রকৃত তথ্য দিলেন। এরপর বহুবার তাঁর সঙ্গে মিটিং করেছি। প্রত্যেকবার একটা ডায়েরি নিয়ে বসেছেন, পয়েন্টগুলো লিখে নিয়েছেন। চার-পাঁচ মাস পর হঠাৎ করে এক দিন ফোন করে তিনি বলছেন ‘তুমি যে এত তারিখে একটা বিষয়ে বলেছিলে, সেটা কিন্তু ঠিক না। আসল তথ্য হলো, এটা।
এটাই ছিল এইচ টি ইমামের বৈশিষ্ট্য। সবার সঙ্গে সব আলোচনায় তাঁর ছোট ডায়েরি আর কলম ছিল সঙ্গী। মূল পয়েন্টগুলো লিখে রাখতেন। এর ফলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এবং সরকারে তিনি হয়ে উঠেছিলেন নির্ভরতার প্রতীক, এক ঐশ্বর্যময়, তথ্যভান্ডার। জাতির পিতার সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করা দুই ব্যক্তির সঙ্গে আমি ঘনিষ্ঠভাবে মেশার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। এদের একজন তোফায়েল আহমেদ। অন্যজন এইচ টি ইমাম। তোফায়েল আহমেদ একজন জীবন্ত ডিকশনারি। দিন-তারিখ থেকে শুরু করে যে কোনো টেলিফোন নম্বর অবলীলায় মুখস্থ বলে দেন, এখনো। ঠিক বিপরীত মেরুতে বসবাস এইচ টি ইমামের। মনে রাখায় তাঁর মোটেও আস্থা ছিল না। তিনি লিখে রাখতেন। কাগজেই তাঁর আস্থার জায়গা ছিল। এইচ টি ইমামকে বলা যেত একেবারে ট্রিপিক্যাল আমলা। প্রতিটি ঘটনা তাঁর ডায়েরিতে গচ্ছিত থাকত। কাজ করতেন গুছিয়ে। ফাইলে ফাইলে তাঁর কাছে থাকত তথ্য। কম্পিউটারে তিনি রাখতেন গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত ও কাজের বিবরণ। পরিকল্পিত, নিয়মমাফিক এবং পেপার ওয়ার্ক করা একটা ছিমছাম পরিচ্ছন্ন মানুষ। রাজনীতিবিদ হয়েও তিনি আমলাতান্ত্রিক ফাইলিং অভ্যাস ত্যাগ করেননি। বরং এটাই ছিল তাঁর বড় শক্তির জায়গা। এইচ টি ইমাম কোনো ক্যারিশম্যাটিক নেতা ছিলেন না। জ্বালাময়ী বক্তৃতাতেও তিনি পারদর্শী ছিলেন না। কর্মীদের নিয়ে হুলুস্থূল করাও তাঁর ধাতে ছিল না কখনো। এ জন্য দলের ভিতরে-বাইরে তিনি খুব একটা জনপ্রিয় ছিলেন না। আওয়ামী লীগে তাঁকে মনে করা হতো আমলাতন্ত্রের প্রতিনিধি। তাঁর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলে আমলাদের উত্থান হয়েছিল বলেও কেউ কেউ মনে করেন। কিন্তু এত সমালোচনার পরও তিনি ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের বড় ধরনের বিপর্যয়ের পর এইচ টি ইমাম সামনে আসেন। নির্বাচন কৌশল প্রণয়নে তিনি ছিলেন অসাধারণ। আওয়ামী লীগের মধ্যে কাগজপত্রের কদর ছিল না। সবকিছু চলত মুখের কথায়। সবার সবকিছু মগজে। সেখান থেকে এইচ টি ইমাম একটি গোছানো ব্যবস্থাপনা চালু করেন। এটিকে তিনি বলতেন ‘পলিটিক্যাল ম্যানেজমেন্ট’। সারা দেশের নির্বাচনী আসনগুলোর তথ্যভান্ডার গড়ে তোলেন। কোন নির্বাচনী এলাকায় কার কী অবস্থা এ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। প্রশাসনে কারা কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী, সে সম্পর্কে তথ্য একত্রিত করেন। মুখে মুখে কথা না বলে, তিনি কাগজপত্র এবং লিপিবদ্ধ তথ্য দিতেন। আর এ কারণেই এইচ টি ইমাম আওয়ামী লীগ সভাপতিরও নির্ভরতার জায়গা হয়েছিলেন। শুধু রাজনীতিতে এসে নয়, তাঁর আমলা জীবনের শুরু থেকে তিনি এরকম একজন গোছানো মানুষ ছিলেন। এর পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর দুই গ্রন্থ থেকেও। ‘বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১’ এবং ‘বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১-৭৫’ দুটি গ্রন্থেই তিনি তাঁর নোট, ডায়েরির গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় এইচ টি ইমামের ডায়েরি থেকে। এইচ টি ইমাম রাজনীতিতে কাগজ, ফাইল, তথ্যভান্ডার গড়ে তোলাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর জন্য তিনি অনেক সময় সমালোচিতও হয়েছেন। কিন্তু তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন নোট, ডায়েরি কতটা প্রয়োজনীয়।

রাজনীতিবিদরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। এই সরকারের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করা হয়, সরকার আমলানির্ভর হয়ে গেছে। সরকারের এই আমলামুখী প্রবণতার জন্য অনেকেই এইচ টি ইমামকে দায়ী করেন। কিন্তু কেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং সরকারপ্রধান আমলাদের ওপর ‘নির্ভরশীল’ তার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেন না। রাজনীতিতে তোফায়েল আহমেদ একজনই হন। যিনি তাঁর মাথাকে একটা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ বানাতে পেরেছেন। অধিকাংশ রাজনীতিবিদই অগোছালো। তাঁর নির্বাচনী এলাকায় কী প্রতিশ্রুতি দেন, তা পরদিন ভুলে যান। কাউকে সময় দিয়ে ভুলে যান। রাজনীতিবিদরা তাঁদের কাজকর্ম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করেন না। ফলে, রাজনীতিবিদদের ওপর মানুষের আস্থা কমতে থাকে। এখন রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তাঁরা কথা দিয়ে কথা রাখেন না। আমি বিশ্বাস করি, কোনো রাজনীতিবিদ বা জনপ্রতিনিধি ইচ্ছা করে এটা করেন না। এটা তাঁর ব্যবস্থাপনার সমস্যা। অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি কাগজপত্র গুছিয়ে রাখেন না, তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক অফিস নেই, টিম নেই। এইচ টি ইমাম দেখিয়ে গেছেন এসব কত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৩ সালের ঘটনা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এক সংবাদ সম্মেলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উত্থাপন করেন। পরদিন এইচ টি ইমাম এক সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন। সেখানে তিনি একটি লিখিত কাগজ সবাইকে ধরিয়ে দিলেন। তাতে দিন-তারিখ দিয়ে লেখা বেগম জিয়া বিভিন্ন সময়ে ১৮ বার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কী কী বলেছিলেন। এরকম একটি তথ্যভান্ডার আওয়ামী লীগের জন্যই শুধু নয়, বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত দরকারি ছিল। একটি কাজ করার আগে কাজটা কীভাবে করা হবে, সমস্যাগুলো কোথায়, কাকে কাকে দিয়ে করা হবে- এরকম একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা যে করা উচিত এবং রাজনীতিতে যে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা এইচ টি ইমাম হাতে-কলমে দেখিয়েছেন। আর এ কারণেই ক্রমশ আওয়ামী লীগে তিনি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর সমালোচকরাও তাঁকে উপেক্ষা করতে পারতেন না।

এইচ টি ইমাম, রাজনীতিতে একটি ভিন্ন ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন। রাজনীতি মানেই এমপি হওয়া, মন্ত্রী হওয়া। হোসেন তৌফিক ইমাম দেখিয়েছেন এমপি, মন্ত্রী না হয়েও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতাবান হওয়া যায়। তিনি এমপি হননি, মন্ত্রীও হননি, ছিলেন মন্ত্রীর মর্যাদায় উপদেষ্টা। তিনি অনেক কর্মী নিয়ে চলতেন না। জনসভার বক্তাও ছিলেন না। এইচ টি ইমাম রাজনৈতিক ব্যবস্থাপক ছিলেন। একজন দক্ষ ম্যানেজার ছিলেন। চোখে আঙুল দিয়ে তিনি দেখিয়েছিলেন, রাজনীতির শূন্যতার জায়গাটা। ব্যবস্থাপনার সংকট যে রাজনীতি মানুষের আস্থা হারাচ্ছে, এটা তিনি খুব ভালো বুঝেছিলেন। আর এ জন্যই রাজনীতিতে তিনি একজন ব্যবস্থাপক হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন, নেতা হিসেবে নয়।

তাই, আমলাতন্ত্র বা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদরা যখন কথা বলবেন, তখন তাঁদের এইচ টি ইমাম থেকে অনেক কিছুই শিখতে হবে। রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁকে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এক দিন এইচ টি ইমাম আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে বলছিলেন- আপনি এভাবে একসঙ্গে এত লোকের সমস্যা শুনে মনে রাখেন কীভাবে? কিছু দিন আগে প্রয়াত ওই নেতা হাসতে হাসতে বলছিলেন- ‘মনে রাখি কই, ভুলে যাই। ওরা নেতার সঙ্গে কথা বলে এতেই খুশি।’ এইচ টি ইমাম বললেন, ‘এটা করবেন না। ভবিষ্যতের জন্য এটা ভালো হবে না। আপনি একজন একজন করে ডাকেন। সঙ্গে আপনার একজন স্টাফ রাখেন, তার বক্তব্য শোনেন এক মিনিট। কাগজপত্র রাখেন। পরে ফলোআপ করেন।’ এইচ টি ইমামের পরামর্শ ওই নেতা যে পছন্দ করেননি, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এই ব্যবস্থাপনা রাজনীতিতে যে গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে, এই ঘটনা তার একটি উদাহরণ মাত্র। শুধু ব্যক্তি নয়, দলের ক্ষেত্রেও এটা প্রয়োজন। কদিন আগেও আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য, পুরনো কাগজের জন্য এইচ টি ইমামের দ্বারস্থ হতে হতো। রাজনীতিতে এইচ টি ইমাম ফাইলের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন।

আমি মনে করি, রাজনীতিতে এইচ টি ইমাম খুব মনোযোগী একজন স্রোতা ছিলেন। তাঁর সমালোচনাও তিনি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবাই কথা বলেন, সারাক্ষণ কথা বলেন। আরেকজন কী বলছেন তা শোনার মতো সময় আমাদের রাজনীতিবিদদের নেই। রাজনীতিতে কিছু মানুষ থাকা জরুরি যারা কথা শুনবেন।

এইচ টি ইমামের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্য ছিল না। সারা জীবনই প্রায় সরকারি চাকরি করেছেন। আওয়ামী লীগে অনেকে আড়ালে তাঁকে কেরানি ডাকত। এইচ টি ইমাম এসব গায়ে মাখেননি বরং নিজেকে একজন নির্ভরযোগ্য এবং অপরিহার্য ‘কেরানি’ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সবাইকে কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতিতে ‘কেরানি’র অনেক দরকার। এইচ টি ইমাম আমাকে কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘যে কাজটা করবে মন দিয়ে করবে, সবাই যেন তোমার কাজে খুশি হয়।’ এইচ টি ইমামও সারা জীবন আমলাগিরি মন দিয়ে করেছেন। তাই কেউ তাঁকে রাজনীতিবিদ হিসেবে স্বীকার করুক আর না করুক, তিনি রাজনীতিতে অপরিহার্য এক বাস্তবতা। বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র এবং রাজনীতি কোথাও তাঁর নাম মুছে ফেলা যাবে না, কোনো দিন।

পাদটীকা : এইচ টি ইমামের ডায়েরি এবং নোট খাতাগুলো অমূল্য সম্পদ। এগুলো আমাদের রাজনীতি এবং সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করতে পারে। এই মূল্যবান দলিলগুলো যেন সংরক্ষণ করা হয় সেদিকে তাঁর পরিবার নিশ্চয়ই খেয়াল রাখবে।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।

সূত্র : বিডি প্রতিদিন

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি