1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন

শিশু চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগেই কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার হ্রাস

মুস্তাকিম নিবিড়
  • আপডেট : রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৩৭৫ বার দেখা হয়েছে
মুস্তাকিম নিবিড়ঃ শিশু শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে স্বর্গীয় সুখ, স্নিগ্ধতা ও পবিত্রতা। নবজাতক পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই নিষ্পাপ চাহনি দিয়ে পুরো পৃথিবী কে জানান দেয়, মানুষের প্রতি মানুষের নিভর্রশীলতা। শিশুরা বুঝে, অনুভব করে, কিন্তু মনোভাব ব্যাক্ত করতে পারে না। নাজুক, তুলতুলে, কোমল শিশুটির রোগবালাই জন্মলগ্ন থেকেই হয়ে থাকে। কিন্তু রোগের ধড়ন, পরিমান, লক্ষ্মণ ব্যাক্ত করার ক্ষমতা যে তাদের নাই। শিশু চিকিৎসকরা তাদের বিস্ময়কর শক্তি ও অধ্যবসায় এর মাধ্যমে নির্নয় করে শিশুর রোগ ব্যাধি। সৃষ্টির সেবায় সত্যিই অসাধারণ অবদান তাদের। বলতে না পারা অবুঝ শিশুটি যে- কারো নারী ছেড়া ধন, কারো রক্তের বাঁধন,  একটি পরিবার ও জাতির ভবিষ্যৎ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ার কারণে শিশুদের রোগাক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর হার সব সময়ই বেশি হয়ে থাকে। শিশু চিকিৎসকরা সত্যিই, সর্বদা খুব ব্যাস্ত ও কঠিন জীবন যাপন করে থাকেন। বলতে না পারা শিশুটির বাহ্যিক আচরণ অবয়ব দেখে তাৎক্ষণিক রোগ নির্নয় এবং চিকিৎসা প্রদান করতে হয় তাদের।
কিন্তু বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ শিশু চিকিৎসকদের মাঝে দেখা যাচ্ছে চিকিৎসার প্রাথমিক স্তরেই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ করার প্রবনতা।
অ্যান্টিবায়োটিক হলো এমন একটা উপাদান যা ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস থেকে সংগ্রহ করা হয়, অন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস কে ধ্বংস করার জন্য বা তার বংশবৃদ্ধি রোধ করার জন্য।
ব্যাকটেরিয়া নিজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারেনা বিধায় নিজেদের অঞ্চল থেকেই তাদের খাদ্য সংগ্রহ করার কারনে তারা একই অঞ্চলে থাকা অন্য ব্যাকটেরিয়া গুলোর সাথে প্রতিযোগীতা করে। এক ব্যাকটেরিয়া আরেক ব্যাকটেরিয়া কে মারার জন্য এন্টিবায়োটিক তৈরী করে। এই এন্টিবায়োটিক ই আমরা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করি। অ্যান্টিবায়োটিক অর্থাৎ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ড্রাগ। এই ধরনের ওষুধ মানুষের শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যাকটেরিয়াকে নির্মূল করে, পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়ার দৈহিক বৃদ্ধি এবং তার কলোনিগুলিতে বংশবিস্তার রোধ করা। তবে অ্যান্টিবায়োটিক কেবল নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়া-ঘটিত ইনফেকশনই প্রতিরোধ করে। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ মুক্ত করতেই মূলত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত।
যে কোনো ইনফেকশনের সময় যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাকটেরিয়ার দৈহিক বৃদ্ধি ও তার কলোনির বংশবিস্তার রোধ করা প্রয়োজন। মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন এবং সেপটিসিমিয়া, এই চারটি রোগে দ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত।
অ্যান্টিবায়োটিক বেশি খাওয়াও ক্ষতিকারক, পাশাপাশি কম খাওয়াও উচিত নয়। কম খেলে ব্যাকটেরিয়া যদি সম্পূর্ণ ভাবে না মরে যায়, তাতে ফের সংক্রমণ দেখা দেবে। বেশি খেলে ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদান্ত্রে অনেক উপকারি ব্যাকটেরিয়া থাকে, সেগুলিও মরে যায়। যার ফলে বেশ কিছু খারাপ রোগ দেখা দেয়। একইসঙ্গে অপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলি তখন বৃদ্ধি পেতে থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্যি এ বিষয়গুলো রোগী কিংবা রোগীর অভিভাবকদের বোঝানো হয় না। যার ফলে এন্টিবায়োটিকের প্রয়োগ যথার্থ হয় না, শিশুদের এন্টিবায়োটিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেখা যায় বেশিরভাগ মায়েরা অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শেষ না হতেই শিশুটি সুস্থ হলে তৎক্ষণাৎ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ বন্ধ করে দেয়। যার ফলে সেই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলো সম্পূর্ণভাবে নিঃশেষ না হওয়াতে কিছুদিনের মধ্যে একই উপসর্গ রোগ ব্যাধি দেখা যায়। পরবর্তীতে পুনরায় চিকিৎসা শুরু করলে পূর্বের প্রয়োগ করা অ্যান্টিবায়োটিকটির কার্যক্ষমতা অনেকখানি হ্রাস পায়। পূর্বেকার হিস্ট্রি না জেনেই পুনরায় সেই একই এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে ডাক্তারগণ, অভিভাবক দ্বারা সঠিক প্রয়োগের অভাবে অ্যান্টিবায়োটিক টি সম্পূর্ণরূপে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। নতুন কার্যকরী ভিন্নধর্মী এন্টিবায়োটিক প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা  ডাক্তার বুঝতে পারার আগে শিশুটির রোগ আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। শিশুটির গুরুতর অবস্থা দেখে শিশু চিকিৎসক অনেক সময় খেই হারিয়ে ফেলেন, গুরুতর অসুস্থ শিশুটির চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সময়ের অভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই, লক্ষণ ও কার্যক্ষমতা অনুযায়ী বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে থাকেন।
অতঃপর শিশুটি সুস্থ হলেও তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই ধ্বংসের দিকে এসে পড়ে। এন্টিবায়োটিকের প্রয়োগ সম্পর্কে চিকিৎসকগণ রোগীর অভিভাবকদের সঠিকভাবে অবহিত না করার কারণে চিকিৎসা খাতে চলে আসে সমন্বয় হীনতার মত নীরব মহামারী। আর চিকিৎসকদের বিভ্রান্ত করার জন্য বিভিন্ন ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর এন্টিবায়োটিক তৈরীর প্রতিযোগিতা লেগেই থাকে। প্রতিনিয়তই দেখা যায় চিকিৎসকদের ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে বিভিন্ন কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ গন। যারা নিজ কোম্পানির ঔষধ চিকিৎসক মারফৎ ব্যবস্থাপনা পত্রতে লিখাতে নানান ভাবে চিকিৎসকদের বাধ্য করে চলছেন।
এর মধ্যে কিছু আসাধু চিকিৎসকদের মাসিক মাসোহারা, ফ্লাট গাড়ি-বাড়ি উপঢকৈন দিয়ে কিছু ভেজাল ঔষধ কোম্পানি তাদের নিম্নমানের ঔষধ সামগ্রী লিখিয়ে নিচ্ছেন। যার মধ্যে জীবন রক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম বিদ্যমান রয়েছে।
এ সকল অসাধু ঔষধ বিক্রেতা কোম্পানিগুলোর কারণে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার গণ বিভিন্ন গ্রুপের ঔষধ এমনকি অ্যান্টিবায়োটিক এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে চলছে নবজাতক শিশুদের উপর। যার ফলে সেই শিশুর জীবনের শুরু থেকেই হারিয়ে ফেলছে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। মানবাধিকারের এমন সর্বোচ্চ লঙ্ঘন পৃথিবীতে আর কি হতে পারে?
শিশু চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ, এবং অসুখ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে চিকিৎসকগণের কেন এত অনীহা? সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত সংবলিত ধারাবাহিক প্রতিবেদন দেখতে চোখ রাখুন দৈনিক জাতীয় অর্থনীতিতে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি